নিজস্ব প্রতিনিধি: চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উপকূলীয় বেশ কয়েকটি জেলার সাংবাদিকরা। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় গত কয়েক মাসে শুধু সাতক্ষীরায়ই হামলার শিকার হয়েছেন ১৩জন এবং খুন হয়েছেন ১ জন। এখনো মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন দৈনিক মানবজমিনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ইয়ারব হোসেন। চরম ভয় এবং আতঙ্কের কারনে উপকূলীয় জেলার সংবাদকর্মীরা সঠিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না বলে অবভযোগ করছেন।চরম নিরাপত্তাহীনতায় এখন নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের সাংবাদিকরা ও চিন্তিত।বিশেষ করে বিগত কয়েক দিনের ঘটনায় জেলার সাংবাদিকদের মাঝে অজানা আতংক কাজ করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে মিডিয়া থাকবে তাবে কোন সাংবাদিক থাকবে না বলে অভিযোগ করছেন জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকেরা।
অন্যদিকে একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশের ব্যর্থতাকে দায়ী করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের দাবী করা হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক মানবজমিন প্রতিনিধি ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের যুগ্ন-সম্পাদক ইয়ারব হোসেন সন্ত্রাসীদের হাতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় দেড় সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও পুলিশ জড়িতদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৩০শে নভেম্বর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে বাসা থেকে সাতক্ষীরায় যাচ্ছিলেন ইয়ারব হোসেন। সদরের আখড়াখোলার দেবনগর এলাকায় পেটৗছলে দুর্বৃত্তরা তাকে মটরসাইকেল থেকে নামিয়ে জিআই পাইপ দিয়ে পিটাতে থাকে। একপর্যায়ে পার্শ্ববর্তী প্রাইমারী স্কুলে নিয়ে মাথার ৫ জায়গায় কোপ দেয় ও ডান পায়ের একাধিক স্থান এবং ডান হাত ভেঙ্গে দেয়। সংবাদকর্মী ও যৌথ বাহিনী তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মুমূর্ষ অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, বর্তমানে ইয়ারব হোসেনের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে। এ ঘটনায় সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনের ভাই আবু সিদ্দিক ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও কোন আসামী ধরা পড়েনি। এর কয়েকদিন পূর্বে ২৬শে নভেম্বর দৈনিক সমাজের কথার কলোরোয়া প্রতিনিধি জুলফিকার আলীর উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ২১শে নভেম্বর সন্ধায় দৈনিক জন্মভূমির দেবহাটা প্রতিনিধি আবু রায়হানকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। ঐদিন বিকালে দৈনিক সংবাদের কলোরোয়া প্রতিনিধি আব্দুর রহমানের বাড়ীতে ঢুকে তার উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ১৯শে নভেম্বর দৈনিক কালের কন্ঠের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মোশারফ হোসেনের উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ১০ই নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি আজাদুর রহমানের বাড়ীতে এবং তার উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ৫ই নভেম্বর রাতে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার শ্যামনগর প্রতিনিধি সামিউল মনিরের উপর ককটেল হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ২৯শে আগষ্ট দৈনিক জন্মভূমির কালিগঞ্জ প্রতিনিধি আবু হাবিব পেশাগত দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় তার উপর হামলা চালায় পিকেটাররা। ৫ই জুলাই শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এতে প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক কালের কন্ঠের শ্যামনগর প্রতিনিধি আকবর কবীর মারাতœক আহত হন। এসময় আহত হন দৈনিক যুগের বার্তার আনিছুজ্জামান, দৈনিক জনতার প্রতিনিধি কামরুজ্জামান, দৈনিক সমাজের কথার প্রতিনিধি সরদার সিদ্দিক, দৈনিক সময়ের কবরের প্রতিনিধি ইনজিনিয়ার শেখ আফজালুর রহমান। ৩রা মার্চ দৈনিক পত্রদুত পত্রিকার গাজীরহাট প্রতিনিদি আসাদুল হকের উপর আক্রমন করে সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও অবরোধে পিকেটারদের মারপিটে আহত হন ফাহাদ হাসান ও আজাহারুল ইসলাম নামের দুই পত্রিকা পরিবেশক। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে জরুরী সভা ডাকা হয়। এতে প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহম্মেদ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদ জানান। সভায় পুলিশের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের দাবী জানান সাংবাদিক নেতারা।
0Share