নিহত হওয়ার পাঁচ মাস পর সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে নিজ গ্রামে এনে দাফন করা হয়েছে প্রবাসী যুবক আবদুর রহমানের লাশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে স্থানীয়রা তার লাশ দাফন করে। নিহত প্রবাসীর বাবা মোঃ হানিফ বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে চলতি বছরের ১ মে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ এলাকার কোয়াইয়া থানা পুলিশ রহমানের রক্তাক্ত লাশ তার কর্মস্থল হারমোলিয়া এলাকার একটি খামার থেকে উদ্ধার করে। মৃত্যুর ৫ দিন পর সে খবর জানতে পারে তার পরিবার।
সৌদি আরবে অবস্থানরত স্বজনদের বরাত দিয়ে রহমানের বাবা হানিফ ও ভাই কাশেম দাবি করেছিল, কাজ নিয়ে বিরোধের জের ধরে মালিকের এক আত্মীয় ও এক সুদানি সহকর্মী তাকে হত্যা করে। পরে গাড়ি চাপায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার করে। তখন এ ঘটনায় পুলিশ এক সৌদি নাগরিক ও একজন সুদানি নাগরিককে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে বলেও জানান নিহতের পরিবার।
এদিকে রহমানের হত্যা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সৌদি দূতাবাস লাশটি পরিবারের নিকট হস্তান্তরের উদ্যোগ নেয়। মৃত্যুর পাঁচ মাস পর লাশ এনে পারিবারিক ভাবে দাফন করা হয়।
নিহত রহমানের বাবা হানিফ জানান, আমরা সাধারণ মানুষ কি করতে হবে তা না জানার পরেও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কারণে ছেলের লাশ দেশে এনে মাটি দিতে পেরেছি। কিন্ত আমরা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি দেশীয় দালাল ও সৌদি মালিকের বিচার দাবী করেন। তিনি আরো জানান এ মৃত্যুর জন্য লাশের সাথে কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ পাননি।
নিহতের মা লাকী বেগম জানায়, সংসারে অভাব অনটনের কারণে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশের এক আত্মীয়র মাধ্যমে ২০১৯ ছেলেকে সৌদি পাঠান। কিন্ত সৌদি গিয়ে জানতে পারে তার চাকরি মরুভূমিতে উট চরানো। এ কাজ করা তারপক্ষে মোটে সম্ভব ছিল না। তবুও বহু কষ্টে তিনি ২ বছর কাটিয়েছেন। করোনার সময়ও তার কোন ছুটি ছিল না। এর মাঝে কারণে অকারণে মালিকপক্ষ তাকে মারধর করতো।
পরে অতি নির্যাতনে সে সেখান থেকে একদিন তিনি পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। যুক্ত হন নতুন আরেকটি কাজে। কিন্ত এখানে গিয়েও সে জানতে পারে তার কাজ মরুভূমিতে ছাগলের খামারের শ্রমিক। নতুন কর্মক্ষেত্রে সুদানি সহকর্মীদের সাথে তার প্রায় ঝগড়া হতো। পরে ১ মে তারিখে রক্তাক্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলেকে হারিয়ে এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখেছে বাবা-মা।
1.8KShare