নিজস্ব প্রতিনিধি: জারিরদোনা খালের ওপর স্থাপিত দোকানঘরসহ ৭৫টি স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি ২৪ শতাংশ সম্পত্তি উদ্ধার হবে এবং খালটিতে পানি চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।
২৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট বাজারে এ অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন। এসময় সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসারসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে খালের ওপর চারটি বহুতল ভবন রয়েছে। ভবন মালিকরা উচ্চ আদালত থেকে সাময়িক স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছে। এজন্য অভিযানের সময় ভবনগুলো ভাঙা হয়নি।
২৫ জুন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মজিবুর রহমান ।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ ঈদুল আযহার আগে অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ প্রদান ও মাইকিং করা হয়। ২২ জুন দ্বিতীয় বারের মতো মাইকিং করে স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকজন তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছে। বাকি স্থাপনাগুলো প্রশাসন অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মজিবুর রহমান বলেন, খালের উপর থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে ৭৫জনকে নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থাপনাগুলো সরানো হয়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন বুধবার ১৩টি স্থাপনা সম্পূর্ণ ঘুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২৬টি স্থাপনা আংশিক ভাঙা হয়েছে। ৪টি বহুতল ভবন কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেওয়ায় সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি।
জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসন ও খালের প্রবাহ পুনরুদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের সর্বকনিষ্ঠ কমলনগর উপজেলার প্রধান শহর হাজিরহাট। লক্ষ্মীপুর জেলা শহর হতে ৩২ কিলোমিটার দূরের হাজিরহাট বাজারের ওপর দিয়ে উত্তর দক্ষিণে আঁকাবাঁকা পথে ছুটে ছিল জারিরদোনা শাখাখাল। ২০০০ সাল পর্যন্ত খালটি ছিল এ অঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতির বাহক এবং জীব বৈচিত্র্যরক্ষার একমাত্র জীবন্ত সত্ত্বা।
সরেজমিন পরিদর্শন কালে জানা যায় কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার সীমান্তবর্তী মেঘনা নদী থেকে কমলনগর উপজেলার ফায়ার সার্ভিস অফিস পর্যন্ত জারিরদোনা শাখা খালের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। মেঘনাপাড়ের পাটারিরহাট মাছ ঘাট থেকে শুরু করে ১ কিলোমিটার দূরে খায়েরহাট স্লুইচ গেটে মিলিত হয় এ খাল। পরে স্লুইচ গেট থেকে আকাঁবাঁকা পথে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে হাজিরহাট বাজার হয়ে উত্তর দিকে ২ কিলোমিটার পরে ফায়ার সার্ভিসের পিছনে মৌলভী বজলুর রহমানের বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়।
২০০৬ সালে কমলনগর উপজেলা গঠনের পরপরই প্রশাসনিক আর ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে হাজিরহাট বাজারের পরিধি বাড়তে থাকে। ফলে ঘরের চাহিদা ও সুযোগ থাকায় স্থানীয়রা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সহায়তায় রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের পশ্চিমপাশ ও খালের পূর্ব-পশ্চিমপাড় জারিরদোনা শাখা খালের ওপরে গড়ে তোলে বহুতল ভবন, শতাধিক আধাপাকা ও টিনসেট দোকান ঘর।
এতে বাজারে খালের মৃত্যু হয়। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলে বাড়িতে পানি জমা হয়। খালে জোয়ার ভাটা বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়দের আবেদনের কারণে ২০১৯ থেকে এখালের অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হলেও রাজনৈতিক কারণে অভিযান পরিচালনা করা হয়নি।। অবশেষে ২৫ বছর পর বুধবার সে কাংখিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এজন্য স্থানীয়রা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং সকল অবৈধ দখল যেন মুক্ত হয় সে প্রত্যাশা করছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত উজ জামান বলেন, উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ হলে খাল সংস্কার করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করা হবে।
0Share