লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ভুলুয়া নদীতে থাকা অবৈধ বাঁধ অপসারণে, কৃষিকাজের পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে ও জলাবদ্ধতা নিরশনে স্বেচ্ছাশ্রমে কয়েক কিলোমিটার পরিষ্কার করেছেন কৃষক, স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয়রা। গত কয়েক দিন থেকে সেচ্ছাসেবীদের সংগঠিত করেছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নে হাজারো মানুষ এ কার্যক্রমে অংশ নেন। পাশ্ববর্তী কমলনগর উপজেলা পর্যন্ত এ কাজ চলবে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি আবদুস সাত্তার পালোয়ানের উদ্যোগে কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা, তোরাবগঞ্জ এলাকার লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। চর পোড়াগাছা এলাকার আজাদ মিয়ার ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে এ নদীটি অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। এর ফলে চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও পাশ্ববর্তী কমলনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে তারা অবৈধ বাঁধ অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
আজাদনগর এলাকার বাসিন্দা কৃষক গোলাম ছারওয়ার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের এলাকার সকল বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত পানি অপসারণ না করতে পারলে আমরা চাষাবাদ করতে পারছি না। এজন্যই ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার লোকজন মিলে আমাদের এ প্রচেষ্টা।
স্থানীয় শিক্ষার্থী সাবিদের ভাষ্য, এটি একটি মহতী উদ্যোগ। ভুলুয়া সরু নদী দিয়ে মেঘনা নদীতে পানি প্রবেশ করে কিন্তু অবৈধ দখলের কারণে রামগতি ও কমলনগরের কয়েকটি ইউনিয়নে জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাই আইনজীবি আবদুস সাত্তার পালোয়ানের উদ্যোগে কমলনগরের লোকজন আর স্থানীয়রা নিজেরাই খাল দখল মুক্তকরণ শুরু করেছেন।
এর আগে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সাত্তার পালোয়ান মানবসৃষ্ট বন্যা রোধে ভুলুয়া নদীসহ লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর সকল খাল থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণ চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন। গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর ভুলুয়া নদীসহ সকল খাল দখলে প্রশাসনের নিষক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এতে ভুলুয়া নদীতে অবৈধ দখলের ঘটনা তদন্ত ও অবৈধ বাঁধ অপসারণে সময় বেঁধে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
অ্যাডভোকেট সাত্তার পালোয়ান বলেন, ৪৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে ভুলুয়া এলাকায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যার পানি কমবে কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এজন্য প্রথমেই ভুলুয়া নদী থেকে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তদন্ত শেষে নদী থেকে অবৈধ বাঁধ অপসারণের জন্য ১০ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই হাজারের মত লোকজন মিলে এ অভিযানে অংশ নিয়েছেন। এ কাজে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন শতভাগ সহযোগীতা করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতা নিরসনে মাননীয় উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ভুলুয়া নদীতে জলপ্রবাহের প্রতিবন্ধকতা অপসারণের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
মিসু সাহা নিক্কন/বার্তা স-09-24
0Share