বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নির্মিত দেশের প্রথম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়ণ কেন্দ্র মুজিব কিল্লা। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মার্টিন ইউনিয়নের এ রকম একটি কিল্লার পুকুর থেকে ৪টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে একই ইউনিয়নের
১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: আবু ছিদ্দিক। কিল্লা ও সংলগ্ন পুকুরটি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী ( সিপিপি)র তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
শনিবার ( ৪ মার্চ) উত্তর মার্টিন বাজার সংলগ্ন মার্টিন ইউনিয়নের ২ নং ওর্য়াডের মুজিব কিল্লা এলাকায় গিয়ে পুকুরে ড্রেজার মেশিন এবং পাড়ে ৪টি পাম্প মেশিন দেখা গেছে। মার্টিন ইউনিয়নের সদস্য মো: আবু ছিদ্দিক এবং স্থানীয় মো: নুরুল করিম নামের স্থানীয় এক যুবকের নেতৃত্বে এ কাজ চলছে বলে তারা নিজেরাই জানিয়েছে। পুকুর থেকে পাইপের মাধ্যমে বালু ২শ মিটার দূরে একটি মসজিদের পাশে স্তুপ করা হচ্ছে।
পুকুরের উত্তরপাড়ে কৃত্রিম পর্বত এবং বাকি তিন পাড়ে ৪০-৫০ পরিবারের বসতি রয়েছে। এসময় সরকারি পুকুর থেকে কি কারণে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মো: আবু ছিদ্দিক বলেন, বালু তুলে রাখবো ভবিষ্যতে কোন কাজে লাগাবো।
কোন অনুমতি ছাড়া সরকারি পুকর থেকে বালু উত্তোলন করতে পারেন কিনা এমনটি জিজ্ঞাসা করলে কোন উত্তর জানাতে পারেননি তিনি।
এদিকে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর মার্টিন মৌজাস্থ দেড় একর আয়তনের পুকুরটি ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী ( সিপিপি) থেকে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেছেন স্থানীয় মো. ইউনুস মিয়া। তিনি সিপিপি’র একজন সক্রিয় সদস্য। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুকুরটি তার ইজারায় রয়েছে।
পুকুরে বালু তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি অসুস্থ বিধায় বাড়িতে রয়েছি। বালু তুলবে বলে তাকে পুকুরের মাছ ধরতে বলেছে মেম্বার। মাছ ছোট বিধায় ধরতে পারিনি। তবে বালু তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবই তো বুঝেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। অন্যদিকে স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা ভাঙ্গন আতংকে রয়েছেন। কিন্ত অজানা ভয়ে তারা চুপচাপ কিছুই বলতে পারছেন না।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির কমলনগর উপজেলা টীম শামছুদ্দোহা খোকন জানান, তিনি মেম্বারকে বালু তুলতে নিষেধ করেছেন। অন্যদিকে ইজারাদারকে তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য বলেছেন।
অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয় জানতে চাইলে রবিবার কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, খোঁজ নিয়ে এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জানা গেছে, ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর বৃহত্তর নোয়াখালীর উপকূলে ৩৩টি কেল্লা নির্মাণের পর তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব পরিদর্শন করেন। তখন তিনি এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেড ক্রিসেন্টকে দায়িত্ব দেন। পরে এ অঞ্চলের মানুষ কেল্লাগুলোর নাম দেন ‘মুজিব কেল্লা’। এসব কেল্লার কারণে ১৯৮৫ ও ১৯৯১ এর ভয়াবহ বন্যায় রক্ষা পেয়েছিল এ উপকূলের মানুষ ও তাদের গৃহপালিত পশু। কিন্তু বর্তমানে এগুলো পুরোটাই বেদখলে চলে গেছে। কমলনগর উপজেলায় বর্তমানে ৫টি মুজিব কিল্লা রয়েছে।
সিপিআর তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল হিসেবে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্র আর পশু-পাখির জন্য নির্মিত হয় মাটির কেল্লা। যখন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষের সংকুলান হয় না, তখন সাধারণ মানুষ ওই কেল্লাতে আশ্রয় নেয়। প্রত্যেকটি কেল্লার অনুকূলে ৫ একর জমি বরাদ্দ, কেল্লা নির্মাণের জন্য কাটা হয় ২টি করে পুকুর। নির্মাণ শেষ হলে এসব তত্ত্বাবধান, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন পশু-পাখির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহারের জন্য রেড ক্রিসেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে এগুলো দেখাশোনা করে সিপিপি।
18Share