নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকায় ছালেহা বেগম (৫৪) নামে এক নারীকে হত্যার ৬দিন পরেও কোন ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ। এঘটনায় নিহতের মেয়ে ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের নামে কমলনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলার পর বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্ত করছে পুলিশ। এর আগে গত ১৬ জুন দুপুরে মতিরহাট এলাকায় নদীরপাড়ের একটি পরিত্যাক্ত বাড়ি থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। নিহত সালেহা বেগম চর কালকিনি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত শাজাহানে স্ত্রী। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি দীর্ঘ দিন বৃদ্ধ মা নুরজাহান বেগম(৮০) এর সাথে গ্রামের বাড়িতে একা বসবাস করতেন। তার তিন ছেলে প্রবাসে এবং মেয়ে স্বামীর বাড়িতে থাকেন।
নিহতের বৃদ্ধ মা নুরজাহান বেগম এবং মেয়ে ফাতেমা বেগম জানায়, গত ২ বছর আগে গৃহশিক্ষক স্থানীয় আবু বকর ছিদ্দিক নামের এক ব্যক্তিকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ছালেহা বেগম। আবু ছিদ্দিক এর আগেও ৩টি বিয়ে করেছিল। পরে এক বছরের মধ্যে আবু ছিদ্দিককে তালাক দেয় ছালেহা। কিন্ত তবুও দ্বিতীয় স্বামী প্রায় সময় ছালেহাকে মোবাইলে কল দিয়ে বিরক্ত করতো । মাঝে মধ্যে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যেতো। বাড়ির আশপাশের প্রতিবেশীরা বিষয়টি জানতো।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১৫ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ভিকটিম সালেহা বেগমের মা বৃদ্ধ নুরজাহান বেগম নামাজ আদায় করছিলেন। এসময় সালেহা বেগমের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। এরপর ফোনে কথা বলতে বলতে ঘর হতে বের হয়ে যান সালেহা। বৃদ্ধ নুরজাহান বেগম জানান, নামাজ শেষে আমি ঘরের বাহিরে গিয়ে মেয়ে সালেহাকে খুঁজতে থাকি এবং প্রতিবেশী কয়েকজনকে জানাই । কোথায়ও কোন সন্ধান না পেয়ে আমি ঘরে ফিরে আসি। ভোরের দিকে বিষয়টি নাতীন ফাতেমাকে জানাই। পরে সকালে নাতীন ফাতেমা তার দুই ভাই শরীফ ও আরিফকে জানায়। এরপরপরই সবাই এসে সালেহাকে খুঁজতে থাকে। কোথাও পাওয়া যায়নি। দুপুরের দিকে মেঘনা নদীর পাড়ে ছেলেরা ফুটবল খেলতে গিয়ে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে ছালেহার মৃতদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার দেয়। পরে স্থানীয় লোকজনসহ তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এদিকে ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পায়। তাতে দেখা গেছে, মরদেহের পাশে একটি সরিষার তেলের বোতল, হাত রক্তাক্ত এবং নাখে মুখে অচেনা কিছু পদার্থ রয়েছে। নিহতের মেয়ে ফাতেমা বেগম বলেন, তার মায়ের শরীরের প্রায় ২ ভরি স্বর্ণের গয়না ছিল। হত্যার পর সব নিয়ে গেছে ঘাতকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছালেহা বেগম তিন ছেলে এবং এক কন্যা সন্তানের জননী ছিলেন। নদী ভাঙনের কারণে চর কালকিনি থেকে বাড়ি স্থানান্তরের জন্য স্বামী শাহজাহান তোরাবগঞ্জ এলাকায় জমি কিনে একটি বাড়ি তৈরি করেন। কিন্ত ওই বাড়িতে উঠার আগেই ২০১৬ সালে তার স্বামী শাহজাহান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরপর ছালেহা স্বামীর পুরতান ভিটে ছেড়ে তোরাবগঞ্জের বাড়িতে যেতে আর রাজি হননি। তিনি বৃদ্ধ মাকে নিয়ে পুরাতন ভিটেই রয়ে গেছেন। এর মাঝে মেঘনা নদীর অব্যাহত জোয়ারের কারণে ছেলেরা পুরাতন বাড়ি ছেড়ে তাদের পরিবার নিয়ে তোরাবগঞ্জ বাজারে চলে আসে। তবে ছালেহা এবং ছেলে মেয়েরা ভিন্ন ভিন্ন বাড়িতে থাকলেও তাদের পারিবারির এবং সকল আত্মীয় স্বজনের সাথে তার খুবই সুসম্পর্ক ছিল। ছেলেরা প্রতিদিনই ফোন করে মায়ের খোঁজ খবর নিতো। ছেলেরা প্রবাস থেকে বাড়িতে এলে মায়ের সাথে ছেলেরা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতো।
ছেলে শরীফ এবং আরিফ জানায়, আমার মায়ের কোন শত্রু ছিল না, তিনি সহজ সরল একজন নিরীহ মহিলা ছিলেন। আমরা জানি না, কে কেন কি উদ্দেশ্যে আমার মাকে এমন নির্মম ভাবে হত্যা করে ? আমরা ঘটনার সষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘাতকদের বিচার চাই।
কমলনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এঘটনায় নিহতের মেয়ে ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকান্ড নিয়ে তদন্ত চলছে। আশা করি খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারবে।
0Share