সানা উল্লাহ সানু/তবারক হোসেন আজাদ: ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ১৩ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার পানি সীমায় ইলিশ ধরা বন্ধে ১১ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সেই সাথে একই সময় সারা দেশে প্রজণন মৌসুমে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় ও মজুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন অমান্যকারীদের ১ বছর থেকে ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মৎস্য বিভাগ মেঘনা নদীতে ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন। তা না হলে আইন অমান্যকারীদের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
মৎস্য ব্যবসার সাথে জড়িত ও জেলেরা জানান, বর্তমানে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে সাগরের লোনা পানি থেকে ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে ছুটে আসে। মেঘনা-তেতুলিয়াসহ গভীর নদ-নদীগুলো ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য বেছে নেয়। গভীর জলের মাছ হিসেবে পরিচিত এই ডিমওয়ালা মাছ ধরার জন্য জেলেরা মেঘনা নদীতে বেশি পরিমাণে জাল ফেলেন। যে কারণে ডিম ছাড়তে আসা অধিকাংশ ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়ে।
মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, মা ইলিশ শিকার বন্ধে জেলেদের সচেতনতা সৃষ্টিতে সভা, মাইকিং, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আড়তগুলো সিলগালা ও বরফ কলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। সর্বোপরি , কোস্ট গার্ড, নৌ বাহিনীর বিশেষ টহল জোরদার করা হবে।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়,
ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি করতে কয়েক বছর যাবত ১০ দিনের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি মার্চ-এপ্রিলে বিভিন্ন পয়েন্টে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখা হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ইলিশ যেসব ডিম ছাড়ে তা মার্চ-এপ্রিলে বড় হতে থাকে। ঐ সময় জাটকা হিসেবে পরিচিত ৯ ইঞ্চির নীচে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ে। মৎস্য গবেষকরা জানান,
২০১১ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত এবং ২০১২ সালে ১৬ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষেধ থাকলেও পূর্নিমার তিথি পরিবর্তন হওয়ায় ইলিশের প্রজনন মৌসুম পরিবর্তন হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ মতামতের পর এ বছর এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আগামী ২৩অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত জলসীমায় ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০০৬ সাল হতে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার। আলেকজান্ডার থেকে ভোলার ইলিশা পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার। শাহবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার। ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তুম পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে আন্দারমানিক পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার এলাকাকে মৎস্য অভয়রণ্য ঘোষণা করা হয়। এসব এলাকায় মার্চ-এপ্রিল ইলিশ শিকার বন্ধ রাখার জন্য জেলেদের মধ্যে রেশনিং চালু করা হয়।
ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর,রামগতি ও কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদীর পাড়ে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছে অবৈধ ব্যবসায়ীরা। তারা মেঘনা নদীর ১৬ টি স্থানে ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করেছে। এ সময় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ ইলিশ সংরক্ষণ করবেন বলে জানা গেছে।
গত বছরে নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ রক্ষার পরিবর্তে তা আটক করে প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মা ইলিশ নিধন, আহরণ, পরিবহণ, বাজার জাতকরণ, বিক্রয় ও মজুদ করে লাখ লাখ টাকা আয় করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ কাজে রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ সদস্যরা ও জড়িত ছিল।
0Share