ডাকাতিয়া নদী ও খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বোরো খেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক। সেচ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা দুটির বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে জমি আবাদ হয়ে আসছে। কিন্তু বোরোর চারা রোপণের পর পানি না পেয়ে খেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সেচ প্রকল্প কর্মকর্তারা নদী-খালে পানি বৃদ্ধির জন্য অপেক্ষা করতে বলেছেন। এমন খবরটি প্রকাশ করছে বাংলা দৈনিক আজকের পত্রিকা।
ডাকাতিয়া নদীতে পানিস্বল্পতার কারণে সেচ প্রকল্পের পাম্পহাউস পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে না পারায় বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন চাঁদপুর সেচ প্রকল্পভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃষকেরা। মাঘের শুরুতে পানি পেয়ে কিছু কৃষক ধানের চারা রোপণ করলেও এরপর থেকে পানির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে।
পানির জন্য সামনের অমাবস্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন পাম্পহাউসের প্রকৌশলী।
লক্ষ্মীপুর: রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ও ৫ নম্বর চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর সেচপ্রকল্প ও বিএডিসির আংশিক খালে পানি না থাকায় কয়েকটি বিলের প্রায় দেড় হাজার হেক্টর ধানখেতের চারা পুড়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে অধিকাংশ মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
সম্প্রতি ইছাপুর ইউনিয়নের নয়নপুর, নারায়ণপুর, শ্যামদানপুরসহ বেশ কয়েকটি বিলে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ চাষাবাদের জমি শুকনো। রোপণ করা জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে আছে। কোথাও কোথাও ধানগাছ পানির অভাবে হলুদ রং ধারণ করেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার নয়নপুর হাওরে এবার সাড়ে তিন হাজার হেক্টরে ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করেছেন কৃষকেরা। এর মধ্যে দুই হাজার হেক্টর ধানখেত পানির অভাবে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শ্যামদানপুর এলাকার বিএডিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান বলেন, পানি না পাওয়ার কারণে কৃষকের হাতে পিটুনি খাওয়ার জোগাড় হয়েছে। দ্রুত পানির ব্যবস্থা না করলে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে।
নয়নপুর এলাকার বিএডিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. সবুজ বলেন, ‘খালে পানি নেই। পানি এলেও আমরা তুলতে পারি না। জায়গায় জায়গায় বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার ফলে এই খাল পর্যন্ত পানি আসতে পারে না।’
চাঁদপুর: চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বারপাইকা, বদরপুর, গাব্দেরগাঁওসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের সেচ খালে পানিস্বল্পতার কারণে সেচকাজে চরম সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা বোরো আবাদের জন্য চারা রোপণ করলেও তাতে পানি দিতে পারছেন না। পানির জন্য কাছের পুকুর বা ডোবা থেকে সেচ করে পানি নিয়ে আসছেন; কিন্তু তাতেও পর্যাপ্ত পানি মিলছে না।
পানির জন্য অপেক্ষার পর কৃষকদের পক্ষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খালে পানি সরবরাহের জন্য বারপাইকা ২ কিউসেক এলপিসি স্কিমের ব্যবস্থাপক ডা. মো. তসলিম উদ্দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত আবেদন করেন।
সরেজমিন সম্প্রতি রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বারপাইকা, বদরপুর ও গাব্দেরগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে মাঠে কিছু অংশে চারা রোপণ করেছেন। চারা রোপণ করলেও পানির অভাবে তা ফেটে যাচ্ছে। অন্যদিকে পানির অভাবে কিছু কিছু মাঠে চারা রোপণই করতে পারেননি কৃষকেরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরবাগাদি পাম্পহাউসের উপসহকারী প্রকৌশলী শরীফ মাহমুদ বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদীতে পানিস্বল্পতা রয়েছে। পাম্প দিয়ে বেশিক্ষণ পানি উঠছে না। তাই সেচ প্রকল্পের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। অমাবস্যায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে আমরা পাম্প দিয়ে পানি দিতে সক্ষম হলে সংকটের সমাধান হবে।’
0Share