সরকারি আইনে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা মানছেন না লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ইটভাটার মালিকেরা।
স্থানীয়রা বলছেন, ভাটাগুলোতে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টর-ট্রলির মাধ্যমে। ফলে চাকায় পিষ্ট হয়ে ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এতে স্থানীয় লোকজন এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আমরা কোন ভাবেই থামাতে পারছি না। প্রতিবাদ করলেই ইটভাটার মালিকপক্ষ নানা ভয়-ভীতি দেখায়।
জানা গেছে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-এর ৫ নম্বর ধারার মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ অংশের ৪ নম্বর উপধারা অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি ভারী যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করতে পারবেন না। এ আইন লঙ্ঘন করলে অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
এলজিইডি রামগতি উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপকূলীয় উপজেলা পর্যায়ে এলজিইডির ৬৭ কিলোমিটার, ইউনিয়ন পর্যায়ে ৭২ কিলোমিটার ও গ্রামীণ পর্যায়ে ক শ্রেণির ২৯ কিলোমিটার ও খ শ্রেণির ৪৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। কমবেশি সব সড়ক ব্যবহার করে ইটের কাঁচামাল ও ইট পরিবহন করছে ইটভাটা কর্তৃপক্ষ।
চর আফজলের স্থানীয় কৃষক জসিম মিয়া বলছেন, এ গ্রামের আশপাশে ২৫টি ইটভাটা রয়েছে ৷ এসব ভাটায় আশপাশের ফসলি জমির ঊর্বর মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করা হয়। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও একটিও বন্ধ হয়নি। আর ভাটাগুলোতে মাটি পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টর-ট্রলির মাধ্যমে। ফলে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে ফসলি জমি ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে এবং সড়কের বিভিন্ন অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। অন্যদিকে আমাদের জমি ও জমির ফসল ধ্বংস হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এলজিইডির সড়ক ঘেঁষে অবৈধভাবে বিভিন্ন ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। ওই সড়ক ব্যবহার করে ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল পরিবহন করছেন এসব ভাটার মালিকেরা। ভারী যানবাহনে ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল পরিবহন করায় সড়কগুলো ক্ষয়ে গেছে। সড়কের জায়গায় জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। ইট পরিবহনের সময় বালু ওড়ায় পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ উপকূলীয় উপজেলায় ৪৯টি ইটভাটা রয়েছে। এগুলোর জন্য মাটি প্রয়োজন। গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে এসব ভাটার ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল ভারী যানবাহনে পরিবহন করা হচ্ছে। আর তা জোগাতে কৃষকদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করছেন ভাটা মালিকরা। মাটি বিক্রি করতে জমিতে পুকুর খনন করছেন কৃষকরা। আর সেই মাটি বহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টর চলাচলে সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে।
জামাল নামে এক ট্রাক্টর চালক জানান, একটি ট্রাক্টরে কমপক্ষে দুই হাজার ইট পরিবহন করা হয়। সে হিসেবে ইটবোঝাই একটি ট্রাক্টরের ওজন পাঁচ থেকে ছয় টন হয়।
স্থানীয়দের নানা প্রতিবাদ, আবেদন আর সংবাদকর্মীদের সংবাদ প্রকাশেও সুফল মিলছে না। এমন অবস্থায় ভবিষ্যৎ কৃষি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া আর বাড়িঘর-রাস্তাঘাট ও পরিবেশ ধ্বংসসহ নানা ক্ষতির শঙ্কায় দিন কাটছে স্থানীয়দের।
চর আফজল গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী সাবিদ জানান, মাটি বহনকারী গাড়ির জন্য উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সরকারি বিভিন্ন দফতরে জানিয়েও আশানুরুপ কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
চর আফজলের আরেক শিক্ষার্থী মারজাহান বেগম জানান, ভাটাগুলো থেকে নির্গত ধোঁয়ায় শ্বাস-নিশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হয়। দিন দিন ফসলী জমি হারিয়ে যাচ্ছে। সেই গ্রামীণ সড়কগুলো ধ্বংস হচ্ছে। মাটি বহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সড়কগুলো দিয়ে ধূলো-ময়লায় হাঁটাচলায় কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রামগতি উপজেলা প্রকৌশলী স্নেহাল রায় বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন ইটভাটা থেকে গড়ে ১০-২০ হাজার ইট গাড়িতে লোড করে চলাচল করছে ৷ এসকল গ্রামীন রাস্তায় গাড়ির লোড ৩০ টনের উপর হয়। এসব ভারী গাড়িগুলো গ্রামীন সড়কে অনবরত চলার কারণে রাস্তাগুলো টেকসই হচ্ছে না ৷ এতে করে রামগতির জনগণ রাস্তার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে জমির উপরের লেয়ারের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ব্রিকফিল্ডের জন্য। এতে করে কৃষি জমির উর্বরতা হারাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, কৃষি জমি, গ্রামীন সড়ক ও পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ ইটভাটাগুলোতে নিয়মিত অভিযান চলছে।
79Share