কামরুল হাসান হৃদয়: জাতীয় পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ বাংলাদেশ’র আয়োজনে ৪ফেব্রুয়ারি ( শুক্রবার ) বিকেলে রোজ গার্ডেন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বন্যপ্রাণী। সংরক্ষণ, জলবায়ু ও পরিবেশ সমস্যা সমাধানে জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যাশা ও যুবদের করণীয় শীর্ষক যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সবুজ বাংলাদেশ এর সভাপতি মোঃ শাহীন আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি, সংসদ সদস্য লক্ষ্মীপুর – ২ আসন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন; বনের গাছপালা কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক কারণে বিলুপ্ত হওয়ায় বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ আজ হুমকির মুখে। পরিবেশ হচ্ছে জীবের প্রতিকূল। জলবায়ু হচ্ছে বৈরী। অথচ, বন-ই হচ্ছে প্রাণির জন্ম, বিচরণ, প্রজনন ও বসবাসের উপযুক্ত জায়গা।
আইইউসিএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বৈরী জলবায়ুর কারণে বাংলাদেশে ৭০৮ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৫৪টি, ৬৩২প্রজাতির পাখির মধ্যে ১২টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে এবং ৩০ প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। ৪৯ প্রজাতির উভচর প্রাণীর মধ্যে ৮টি, ১৬৭ সরীসৃপ প্রজাতির মধ্যে ১৭টি বিলুপ্তির পথে। ১২৭টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে ১২টি বিপন্ন আর ১৭টি বিলুপ্তির পথে। ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ১০৬টি অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ডাইনোসোরের মতো বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে বাঘ। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৫০টি বাঘ কমে যাচ্ছে।
দেশের জীববৈচিত্র্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার হচ্ছে বন। বন-ই হচ্ছে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। বন আছে বলেই উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে আছে। বন শুধু গাছপালাই রক্ষা করে না। সব প্রাণিজগৎকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অনেক উন্নত জাতের ফসল উদ্ভাবনের জন্য বন্য প্রজাতির ফসলের জিন সংগ্রহ করা হয়। প্রায় দুই হাজার প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদের জন্ম, উৎপত্তি, বাস ও নিরাপদ স্থান হচ্ছে বন। আগে বন-ই ছিল মানুষসহ সব প্রাণির খাদ্যের উৎস। প্রকৃতির প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণির খাদ্যের জন্য একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
বন, পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মোট ভূমির ২৫ভাগ বন থাকার প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশে আছে এর চেয়ে অনেক কম। বন অক্সিজেন বাড়ায়, বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড।
বন পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় মোট ভূমির ২৫ ভাগ বন থাকার প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশে আছে এরচেয়ে অনেক কম। বন অক্সিজেন বাড়ায়, বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড কমায়, বৃষ্টিপাত ঘটায়, ভূমিক্ষয় রোধ করে, বন্যা-খরা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো প্রতিরোধ করে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ ও মাটিদূষণ রোধ করে। ওজনস্তর ক্ষয়রোধ করে। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কম রাখে। পরিবেশ নির্মল রাখে।
বন ধ্বংসের প্রধান কারণ হচ্ছে- জনসংখ্যা বৃদ্ধি। অতিরিক্ত জনসংখ্যার মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ ৬০ ভাগ জ্বালানির চাহিদা পূরণ করছে বনের কাঠ দিয়ে। এছাড়াও বসতবাড়ি নির্মাণ, ফসল চাষাবাদ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, নগরায়ণ, জুমচাষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৃক্ষের পরিচর্যার অভাব, পরিবেশদূষণ, পাহাড় কাটা, পাহাড় ধ্বংস, বৃক্ষের রোগ, বনবিধি অমান্য করাসহ বিভিন্ন কারণে বন ধ্বংস হচ্ছে।
দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বন রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য বন ও বন্যপ্রাণী অপরিহার্য।
সম্মেলনে আরোও উপস্থিত ছিলেন সবুজ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু, সহ-সভাপতি মাহবুবুর রশীদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মহিন উদ্দিন বি.কম, কামরুল হাসান হৃদয়সহ প্রমুখ।
0Share