সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর মঙ্গলবার , ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ঝড় জলোচ্ছ্বাস হলেই বড় ক্ষতির আশংকা লক্ষ্মীপুরে

ঝড় জলোচ্ছ্বাস হলেই বড় ক্ষতির আশংকা লক্ষ্মীপুরে

ঝড় জলোচ্ছ্বাস হলেই বড় ক্ষতির আশংকা লক্ষ্মীপুরে

সানা উল্লাহ সানু: ঘূর্ণিঝড় মোখাসহ আগামী ৩ বছরের মধ্যে যে কোন ধরনের ছোট বড় ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস হলেই বড় রকমের ক্ষতির আশংকা করছে মেঘনানদীর পাড়ের জেলা লক্ষ্মীপুরের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা।

ঝড় জলোচ্ছ্বাস হলেই ঝূঁকিতে পড়বে জেলার কমলনগর ও রামগতি উপজেলা রক্ষাকারী ৩১শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। সে জন্যই আসন্ন যে কোন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে দুঃচিন্তায় তাদের।

সরেজমিনে ঘূর্ণিঝ মোখার প্রস্তুতির বিষয় জানতে গেলে শুক্রবার (১২মে) মেঘনা নদীর তীরে অবস্থানকারী স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এমন আশংকা প্রকাশ করছেন।

এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, বর্তমান প্রকল্পের অধীন চলতি অর্থ বছরে প্রায় দুইশ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের কিছু অংশের কাজের মেয়াদ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ করার কথা রয়েছে। তবে বাকি কাজী আগামী ৩ বছর শেষ হবে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মেঘনানদীর পূর্বপাড়ের জেলা লক্ষ্মীপুরের ৩৩ কিলোমিটার এলাকায় নদী তীর রক্ষায় ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাঁধনির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় কিছু এলাকায় ২০২২ সাল থেকে বাঁধ নির্মাণের প্রাথমিক কাজ নদীতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং চলছে ।

কমলনগরের মাতব্বরহাট এলাকার দক্ষিণপাশে দাঁড়িয়ে সেখানকার বাসিন্দা মোঃ কবির জানায়, ঝড়ের কারণে অতিমাত্রায় জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস হলে জিও ব্যাগ স্থানচ্যুত হয়ে নদী পড়ে যেতে পারে। এতে ঠিকাদাররা আর দ্বিতীয়বার নির্মাণ করবে না।

পাটোয়ারিরহাট এলাকার বাসিন্দা রাকিব হোসেন লোটাস জানায়, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোখাসহ এ প্রকল্প চলাকালীন সময়ে যে কোন ছোট বড় ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধের জিও ব্যাগ নষ্ট হলে বা অন্যকোন ক্ষতি হলে এলাকার জন্য বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কারণ এরকম কোন ক্ষতি হলে ঠিকাদার কিংবা কর্তৃপক্ষ কেউই এর দায় নিবে না। ফলে আমরা আশংকা করি এমন কোন ক্ষতি হলে ঐ এলাকায় আর কোন বাঁধ নির্মাণ হয়তো হবে না।

অন্যদিকে নদী ভাঙ্গা মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করা স্থানীয় সামাজিক সংগঠন কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহবায়ক এবং সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি আবদুস সাত্তার পলোয়ান জানায়, কিছু অসৎ ঠিকাদার সব সময় দূর্নীতির ফাঁক ফোকর খোঁজে। আসন্ন যে কোন ঘূর্ণিঝড় কিংবা আমবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে বাঁধের জিও ব্যাগের কোন সামান্য ক্ষতি হলে ঠিকাদারগণ বড় অজুহাত দেখিয়ে দূর্নীতির সুযোগ পেয়ে যাবে। তারা হয়তো কাজ না করেও দেখিয়ে দিবে সেখানে কাজ হয়েছে, যা মেঘনায় চলে গেছে।

আবদুস সাত্তার পলোয়ান বলেন, শুরু থেকেই আমার আশংকা প্রকাশ করে প্রতিবাদ করে আসছি যে এত বড় একটি প্রকল্প চলছে কোন রকম তদারকি ছাড়াই। জিও ব্যাগের যে কাজ গুলো হচ্ছে তা দায়সারা ভাবে করা হচ্ছে। জিও ব্যাগ রক্ষায় এখনো বড় প্রতিরক্ষা তৈরি করা হয়নি। ফলে যে কোন ধরনের ঝড় ও জোয়ার জলোচ্ছ্বাসকে পূঁজি করে এ অঞ্চলের মানুষের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ তিন যুগের বেশির সময় থেকে মেঘনা নদীর তীব্র ভাঙ্গন চলছিল লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় কমলনগর ও রামগতি উপজেলায়। এতে প্রায় ৩শ বর্গকিলোমিটার এলাকা মেঘনায় বিলীন হয়ে যায়।

নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য ২০২১ সালের ১ জুন তারিখে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির-একনেক সভায় ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাশ হয়।

প্রকল্পের আওতায় মেঘনাপাড়ে ৩৩কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ৩ ধাপের কাজের প্রথম ধাপ হচ্ছে নদীপাড়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে পানির তীব্র স্রোত বন্ধ করা। ২য় ধাপে জিও ব্যাগের ৩০ মিটার দূরে মাটি দিয়ে উচু বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ৩য় ধাপে বাঁধের ওপর পাথরের তৈরি ব্লক ফেলে বাঁধ সংরক্ষণ করা হবে।

২০২১ সালের আগস্ট থেকে কয়েকটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার আহবান করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ৯৯টি লটে কাজ পায় ঠিকাদারা। প্রতি লটে ৩শ ৩০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মাতাব্বর হাটে কাজের উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক।

স্থানীয়রা জানায়, উদ্বোধনের পর দীর্ঘ সময় বালুর অভাব দেখিয়ে কয়েক মাস কাজ বন্ধ ছিল। চলতি বছরে কয়েটি পয়েন্টে শুধুমাত্র জিও ব্যাগের কাজের কিছুটা অগ্রগতি হয়। মাত্র একটি পয়েন্টে ৩শ মিটারের একটি বাঁধ তৈরি হয়। অন্য সবগুলো পয়েন্ট পুরো অরক্ষিত।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানায়, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় মোখাসহ যে কোন ঘূর্ণিঝড় ও বড় জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় রামগতি কমলনগর উপজেলার ৩৩ কিলোমিটার নদীর তীরে বাঁধ নেই ।

বাঁধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার হওয়া ৯৯টি লটের মধ্যে ৪৩ লটে প্রায় ১৪ কিলোমিটার বাঁধ নিমার্ণের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩ কিলোমিটার এলাকায় জিও ব্যাগের ড্যাম্পিং শুরু হয়েছে। কিন্ত একটি পয়েন্টেও ড্যাম্পিং শেষ হয়নি। এর মধ্যে মাত্র ৪ কিলোমিটার এলাকায় ৫০-৮০ ভাগ ড্যাম্পিং কাজ শেষ হয়েছে । যা ৩৩ কিলোমিটার পুরো প্রকল্পের ১০-১৫ ভাগ । ৩ হাজার কোটির টাকার প্রকল্পে এ পর্যন্ত প্রায় ২শ-আড়াইশ কোটি টাকার কাজের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের পর থেকে ৪৩ লটের মধ্যে মাত্র ৮টি লটে (প্রতি লটে ৩৩০ মিটার) কাজ চলছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ জানায়, ড্যাম্পিং করা জিও ব্যাগ নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে পারলেও বাঁধ শেষ না হলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সাথে তা লড়াই করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে ঝড় বা ভারী জলোচ্ছ্বাস ও পূর্ণিমার জোয়ার বাড়লে বাঁধের জিও ব্যাগের আশংকা তো থাকবেই। ফলে মোখাসহ যে কোন ঝড়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় বড় ক্ষতি হতে পারে।

প্রকৃতি | পরিবেশ আরও সংবাদ

কমলনগরে বন্ধ অবৈধ ইটভাটা চালু করায় প্রতিবাদে মানববন্ধন 

‘‘সবুজ বাংলাদেশ’’ এর আহবানে তারুণ্যের উৎসব

বিষ প্রয়োগে মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর অংশে মাছ শিকার, নিধন হচ্ছে জলজ প্রাণীও

১৯৭০ থেকে ৫৪ বছরের ঝড়ে উপকূলে অন্তত ১২ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়

লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরে জনবহুল এলাকায় ইটভাটা, বন্ধের দাবি এলাকাবাসীর

এডভোকেট সাত্তার পালোয়ানের আহবানে স্বেচ্ছাশ্রমে ভুলুয়া নদীর বাধা অপসারণ

Lakshmipur24 | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয়ে নিবন্ধিত নিউজপোর্টাল  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2025
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Muktizudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com