নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের পাশের জেলা ভোলার চরফ্যাশনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বাধুনিক ২২৫ ফুট উচ্চতার ওয়াচ টাওয়ার ‘জ্যাকব টাওয়ার’ উদ্বোধন হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় এই টাওয়ারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। স্থানীয় ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থাপনা শৈলীর এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে চরফ্যাশনের এই জ্যাকব টাওয়ার আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতিতে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে। ভোলা হয়ে উঠবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান।
পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের নামে গড়া ‘জ্যকব টাওয়ার’ দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ারের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে। ভোলার চরফ্যাসনে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা এই স্থাপনা উপমহাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞরা। যার স্বীকৃতি চাওয়া হয়েছে, ইউনেস্কোতেও।
প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ওয়াচ টাওয়ার তৈরি হয়েছে দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাসন উপজেলা শহরের খাসমহল মসজিদ ও ফ্যাসন স্কয়ারের পাশে। ১৬ তলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারের উচ্চতা ২২৩ ফুট। যেখান থেকে দেখা যাবে পশ্চিমের তেতুলিয়া নদী, পূর্বে মেঘনার জলধারা আর দক্ষিণে প্রসিদ্ধ চর কুকরি-মুকরিসহ বঙ্গোপসাগর। টাওয়ারের উপরে বসানো হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এক বাইনোকুলার। যা দিয়ে পর্যটকরা আশেপাশের প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
জানা গেছে, ২২৫ ফুট উচ্চতার জ্যাকব টাওয়ারে উঠে শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে আশপাশের নদী-সাগর-চরাঞ্চল-ম্যানগ্রোভ বন, আর লোকালয়ের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। এখান থেকে পর্যটকরা ভোলা ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা, চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর, তারুয়া সৈকত, বঙ্গোপসাগর, পটুয়াখালী জেলার বেশকিছু এলাকা স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। ১৬তলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারের প্রতিটি তলায় একইসঙ্গে ৫০ জন এবং গোটা টাওয়ারে একসঙ্গে ৫০০ দর্শক অবস্থান করতে পারবেন। টাওয়ারে পর্যটকদের ওঠানামার জন্য আধুনিক স্বচ্ছ গ্লাসের ক্যাপসুল লিফটের ব্যবস্থা রয়েছে।
পরিবেশ ও পর্যটকবান্ধব জ্যাকব টাওয়ার মূলত পর্যটকদের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য নির্মিত হয়েছে। টাওয়ারের আশপাশে ভূ-দৃশ্যায়নকে দৃষ্টিনন্দন করতে ল্যান্ডস্কেপিং প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
দৃষ্টিনন্দন এই ওয়াচ টাওয়ার সম্পর্কে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, ‘এই ওয়াচ টাওয়ারটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আকর্ষণীয় ও সর্বাধুনিক সুউচ্চ একটি টাওয়ার হবে। এটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশের মানচিত্রে নতুন স্থান করে নেবে। ভোলা জেলাকেও বহিঃবিশ্বে আলাদা পরিচিতি এনে দেবে।’ তিনি বলেন, ‘টাওয়ারটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।’
চরফ্যাশন পৌরসভার মেয়র বাদল কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ‘জ্যাকব টাওয়ারে পর্যটকরা নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। ১৬ তলায় দর্শকরা শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে চতুর্দিকের ভূদৃশ্য স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।’
চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হাসান জানান, টাওয়ারের সার্বিক তত্ত্ববধানে রয়েছে চরফ্যাশন পৌরসভা। পর্যটকদের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ জনপ্রতি ১০০ টাকা প্রবেশ ফি নির্ধারণ করেছে।
এদিকে, ওয়াচ টাওয়ার উদ্বোধনের খবরে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা। ওয়াচ টাওয়ার উদ্বোধনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে এবং একইসঙ্গে সরকারি খাতে রাজস্ব আয় বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।
0Share