সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বুধবার , ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রামগতিতে অবাধে গলদা চিংড়ির রেণু শিকার চলছেই !

রামগতিতে অবাধে গলদা চিংড়ির রেণু শিকার চলছেই !

রামগতিতে অবাধে গলদা চিংড়ির রেণু শিকার চলছেই ! এ রেণু আহরণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে হাজারো প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।

মিসু সাহা নিক্কন, রামগতি : লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মেঘনা নদী ও সংযোগ খাল থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে মৌসুমে কোটি কোটি টাকার গলদা চিংড়ির রেণু পোনা শিকার করছে অসাধু জেলেরা। কাজটি অবৈধ হলেও প্রকাশ্যেই চলছে। যারা চিংড়ির রেনু ধরছে অবৈধ কাজ হিসেবে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ভীতি নেই। জেলে জরিমানা করেও থামানো যাচ্ছে না এ অবৈধ কার্যক্রম।

উপকূলীয় রামগতির মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে অবাধে চলছে গলদা-বাগদা চিংড়ির রেণু আহরণ। এ রেণু আহরণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই ধ্বংস হচ্ছে হাজারো প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।

নদীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, নিষিদ্ধ মশারি ও ঠেলা জাল দিয়ে জেলেরা লাখ লাখ চিংড়ি রেণু আহরণ করে বিক্রি করছে স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে। ব্যাপারীরা সেগুলো দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে খুলনা, বাগেরহাট ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে। বছরের বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত এ তিন মাস মেঘনায় পোনা ধরা নিষেধ থাকলে মেঘনা পাড়ের হাজার হাজার জেলে অবাধে চিংড়ির পোনা সংগ্রহ করছে। এসময় রেণুর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির পোনাও নষ্ট হচ্ছে।

রামগতির ওসখালী, রঘুনাথপুর, ব্রীজ ঘাট, টাংকী বাজার, আলেকজান্ডার, জনতা বাজার, বড়খেরীসহ বেশ কিছু স্থানে গিয়ে চিংড়ির আহরণ ও মৎস্য প্রজাতির এ ধ্বংসলীলা দেখা যায় প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত। অথচ প্রজনন মৌসুম থাকায় এ সময়টাতে নদীতে মাছ ধরার প্রতি রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা।বিশাল উপকূলীয় এলাকায় প্রতিদিনই লাখ লাখ চিংড়ি পোনা আহরণ করা হচ্ছে। এতে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও এ উপকূলীয় অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ চিংড়ি পোনা আহরণ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে।

মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে জেলেরা সব বাধা-নিষেধ অমান্য করে রেণু আহরণ করছেন ফলে দিন দিন মেঘনা নদীতে ইলিশসহ বিভিন্ন জাতের মাছের আকাল দেখা দিচ্ছে।

বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, জেলে, শিশু ও বৃদ্ধ সবাই মশারি, নেট জাল, চাদর ও ঠেলা জাল নিয়ে চিংড়ি রেণু আহরণ করছে। জেলেরা শুধু বাগদা-গলদা চিংড়ির রেণু সংগ্রহ করে অন্যান্য মাছের রেণু ও জলজ প্রাণী ফেলে দিচ্ছে। চলতি মৌসুমেই চিংড়ির রেণু পোনা বিক্রি করে এখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দেশের উপকূলীয় এলাকায় তিন মাস মাছের পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করা হয় কিন্তু নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই পোনা শিকার।

স্থানীয় জেলে রফিক, হেলাল, রহিম সহ অনেকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটেরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে গলদা ও বাগদা চিংড়ির মোকাম। এ সব মোকামের বেশির ভাগ পোনার চাহিদা মেটাতে হয় মেঘনা নদী থেকে। তারা আরও জানান, বিভিন্ন জেলার আড়ৎদারের কাছে প্রতিটি পোনার পিছ বিক্রি হয় এক থেকে দুই টাকা করে । অনেক সময় তারা পোনা শিকারিদের অগ্রিম টাকাও দিয়ে থাকেন। মৌসুমের এ তিন মাস গলদা চিংড়ির ব্যবসা হয় ফলে জেলেরা চিংড়ির রেণু শিকারে উৎসব মুখি হয়ে ওঠেন।

এ অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা বলছেন, আমরাও বুঝি আমরা অনেক মাছের জাত ধ্বংস করছি, কিন্তু কী করবো? জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে এই রেনু আহরণ করছি। আড়তদাররা হকারের মাধ্যমে জেলেদের কাছ থেকে রেনু সংগ্রহ করেন। সবাই নির্দিষ্ট হারে কমিশন পায়। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি পোনা এক টাকায় বিক্রি করলেও খুলনা পর্যন্ত যেতে তার দাম পড়ে তিন টাকারও বেশি।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়খেরী এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, এ অবৈধ কাজের ফলে নদী মাছশূন্য হয়ে যাচ্ছে। এ অবৈধ কাজের জন্য প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা দিয়েও ধামানো যাচ্ছে না এ কার্যক্রমের। আসার আগে মৎস্য অফিসের এক অসাধু কর্মচারী অবৈধ কারবারিদের ফোন করে দেন। ফলে অনেক অভিযান ব্যর্থ হয়, এলে আর কাউকে পাওয়া যায় না।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় এ অঞ্চলে অনেক মাছ পাওয়া যেতো। এভাবে চিংড়ির রেনু আহরণ করতে গিয়ে মাছের অনেক প্রজাতি ধ্বংস হচ্ছে, এর ফলে নদীতে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।

এলাকার সাধারণ মানুষ বলছেন, প্রাকৃতিক উৎস হতে বেপরোয়াভাবে এই রেণু শিকার বন্ধ করা দ্রুত প্রয়োজন, নচেৎ এক সময় নদী শূণ্য হয়ে যাবে।

রামগতি সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর অভিযান পরিচালনা করি। এবছরও উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছে। সব সময় না পারলেও মৌসুমে মাঝেমধ্যেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে এবং মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে। নদী থেকে চিংড়ির রেণু পোনা ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু চক্র এ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে রেণু আটক করে রেণু পোনাগুলো নদীতে অবমুক্ত করছি। চিংড়ির রেণু পোনা নিধন প্রতিরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

 

মিসু সাহা নিক্কন/বার্তা/05/23

লক্ষ্মীপুর সংবাদ আরও সংবাদ

লক্ষ্মীপুরে এনসিটিএফ এর বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত

এ জনপদের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো হবে: চন্দ্রগঞ্জ প্রেসক্লাবে এমএ সাত্তার

লক্ষ্মীপুরে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১০ বছর উৎযাপন

চর রমনী মোহনের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদে দেড় বছর পর আদালতে ভোট গণনা

রামগতিতে অবাধে গলদা চিংড়ির রেণু শিকার চলছেই !

লক্ষ্মীপুরে তালের চারা পরিচর্যা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com