লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইজাড়া গ্রহিতা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডরপকে উচ্ছেদ করে সরকারি সম্পত্তি বেদখল করার উদ্দেশ্যে মামলা দায়েরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইজাড়া গ্রহনের দীর্ঘ ২৬ বছর পর ইজাড়া প্রদানকারী পানি উন্নয়ন বোর্ড-ওয়াপদার বিরুদ্ধে মামলা না করে উন্নয়ন সংস্থার কর্মীদের নামে এ মামলা দায়ের হলো। এতে এলাকায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
মো.শাহদাত হোসেন তহসিলদার নামের স্থানীয় একজন জায়গাটি তার দাবি করে লক্ষ্মীপুর দেওয়ানী আদালতে উচ্ছেদ মামলা দায়ের করেন। শাহদাত হোসেন আবদুল্লাহপুর গ্রামের মৃত মনসুর আহম্মদের ছেলে। তিনি রায়পুর পৌরসভায় তহসিলদার হিসেবে কর্মরত আছেন। শনিবার (১৪ নভেম্বর) সকালে ডরপের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো: আবদুল মালেক সাংবাদিকদের নিকট জানান, মামলাটি ভিত্তিহীন ও সরকারি সম্পত্তি বেদখলের উদ্দেশ্য বলেও জানান তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর গ্রামের লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের ছোট স্টেশনটি পথচারী ও স্থানীয়দের নিকট ওয়াপদা অফিস নামে পরিচিত।
১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি অফিস থাকার কারণে পুরো এলাকাটিই মানুষের নিকট ওয়াপদা অফিস হিসেবে পরিচিতি পায়। এটি এখনো ওয়াপদা অফিস নামে পরিচিত।
স্থানীয় মো. ইব্রাহীম (৮৫) জানান, ১৯৫৪ সালে ভবানীগঞ্জ থেকে তোরাবগঞ্জ পর্যন্ত যে বেড়িঁবাধঁ নির্মাণ করা হয় তার কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ স্থানটি তাদের অফিস হিসেবে ব্যবহার করে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর ১৯৭০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে পরিত্যক্ত এ অফিসটি অপরাধের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়।
ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মো: খোকন মেম্বার জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আব্দুল্লাপুর মৌজার ৬৩৯ দাগের ০.৫১ একর জায়গাটি পরিত্যক্ত অফিসসহ স্থানীয়দের সহযোগীতায় ১৯৯৪ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডরপকে ইজাড়া প্রদান করা হয়। কিন্ত এখন শুনছি এ জায়গা নাকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নাভ। তিনি বিষয়টিকে হাস্যকর বলে জানান।
স্থানীয় নারী মুরশিদা বেগম (৫০) মামলার বাদীর বিষয়ে অভিযোগ করে জানান, বাদী শাহদাত হোসেন ভূমি অফিসে চাকুরী করার কারণে জায়গা জমির ত্রুটি বুঝে তা পরে নিজের সুবিধা মতো ব্যবহার করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী মো. শাহদাত হোসেন তহসিলদার বলেন, ওই জায়গা তার। কিন্ত জমি অধিগ্রহনের ৭৬ বছর (১৯৫৪) এবং ইজাড়া প্রদানের ২৬ বছর পর ইজাড়া গ্রহিতার বিরুদ্ধে কেন মামলা করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন জায়গা নেই। তাহলে জায়গাটির নাম তাহলে ওয়াপদা অফিস হলো কিভাবে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি।
এদিকে ডরপের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবদুল মালেক জানান, সংস্থাটি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইজাড়া গ্রহনের পর ওখানে একাধিক অবকাঠামো তৈরি করে দীর্ঘ ২৬ বছর যাবত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এ অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত মাতৃত্বকালীন ভাতার ধারণাটি আজ রাষ্ট্রীয় স্বাীকৃতি নিয়ে সারাদেশে সরকারি ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ডরপের প্রতিষ্ঠাতা এএইচএম নোমান বাংলাদেশে মাতৃত্বকালীন ভাতার উদ্ভাবক। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালে ফিলিপাইন ভিত্তিক ‘গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার’ লাভ করেন।
স্থানীয় ভাবে জানা যায়, প্রাচীন ভুলুয়া নদী ও মেঘনার ভাঙ্গনে কবলিত তৎসময়ের নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলাকে রক্ষার জন্য ১৯৬০ সালে ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর হতে দক্ষিণে রামগতি বর্তমান কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ বাজার পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মম করে। সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৮টি মৌজা থেকে ১১৭.৭৩ একর জমি অধি গ্রহন করে। যার মধ্যে আব্দুল্লাপুর মৌজায় ৬৩৯ দাগে ০.৫১ একর জমি অধিক গ্রহন করা হয়। বাধ নির্মান ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড উক্ত স্থানে অফিস স্থাপন করে। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানপনাটি ব্যবহার করে। ১৯৭১ সাল হতে দেশে মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭২ সলের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে স্থাপনাগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
0Share