সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর শুক্রবার , ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আমরা যাবো কোথায়?

আমরা যাবো কোথায়?

আমরা যাবো কোথায়?

দিলরুবা সরমিন: আমাদের যাবার কোন জায়গা নাই। না নিজ দেশে। না বিদেশে। না ঘরে। না বাইরে। আমরা যাযাবর। আমরা উদ্বাস্তু। আমরা নাম গোত্র পরিচয়হীন। আমাদের শেষ ভরসা আঞ্জুমানে মফিদুলে। বেওয়ারিশ হিসাবে আমরা একদিন বিলীন হয়ে যাব। আমাদের জন্য শোক দিবস হবে না। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত হবে না। বুকে কালো ব্যাজ কেউ ধারন করবে না। টেলিভিশন চ্যানেলে টক শো’তে কেউ আলোচনা করে মুখে ফেনা তুলবে না। আমাদের জন্য কেউ স্মরণ সভা করবে না। এমন কি আমাদের জন্য এলাকায় মিসকিন খাওয়ানো বা মাইক বাজানোর মতো ঝঞ্ঝাটেও জড়াবে না।

কারণ আমরা সাধারণ জনতা। যাদের প্রাণের কোন দাম নেই। নেই বেঁচে থাকার অধিকার। নেই কাজ করার অধিকার। নেই ছেলেমেয়েদের কে শিক্ষাদীক্ষা দেবার অধিকার। আমাদের কোন অধিকারই নাই। আমরা জিম্মি একদল রাজনৈতিক নেতাদের হাতে। যারা ইচ্ছা করলেই যে কোন সময়ে বা অসময়ে যে কোন কারণে আন্দোলন, সংগ্রামের ডাক দিয়ে বসলেই আমরা সেটা মানতে বাধ্য। আমরা হলাম মনুষ্য সম্পদ। যাদের চেয়ে সস্তা এই বাংলাদেশে আর কিছুই নাই। যাদেরকে পুঁজি ও জিম্মি করে আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতারা হিরক খচিত সোনার সিংহাসনে বসে কেবল ঢেকুর তুলছে। আর তাদের সেই সুখ ঢেকুরের শব্দেই আমরাও তৃপ্তির ঢেকুর তুলি।

আমরা এর বাইরে আর কী করতে পারি ? কারণ আমরা তো প্রাণী সম্পদ। দ্বিপদ প্রাণী। আমাদের করার আসলে কিছুই নাই। বেশি কিছু বললে অনেক অঘটন ঘটে যেতে পারে। আর না বললে নিজেকে তো পশুর সাথেও তুলনা করা উচিৎ না।

প্রচ- খারাপ লাগা কাজ করছে নিজের ভেতরে। আমরা কি পশুরও তুল্য নই? তাহলে কেন একদল দুনীর্তিবাজ রাজনীতিবিদদের অহেতুক ও অমূলক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছি আমরা? ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত কয়জন রাজনৈতিক নেতা নেত্রী অবলীলায় রাজপথে, রেল পথে প্রাণ দিয়েছেন? আর কতজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ রাজনৈতিক অর্থহীন কর্মকা-ের বলি হয়েছে ?

আমরা হলাম রাজনীতিবিদদের বলির পাঠা। আমাদের লাশ গণণা করে রাজনীতিবিদেরা হিসাব করেন তাদের দেয়া কর্মসূচি কতটুকু সফল হয়েছে। আর তাই ৪৮ ঘণ্টার দেশ অবরোধ সফল হওয়ায় তারা ভেবে বসে থাকেন যে, আরো একদিন বৃদ্ধি করা যায়। তাই বলা নাই কওয়া নাই অবরোধের সময় বৃদ্ধি করে। অথচ এই ৪৮ ঘণ্টার অবৈধ অবরোধে কতজনের প্রাণ গেল সেই হিসাব করে না। দরকার টা কী? তাদের চাই লাশ। যত লাশ তত সফল তাদের কর্মসূচি! এই মানসিকতা নিয়ে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার কথা ভাবেন তারা আসলে কী? মানুষ? পশু?

দুটির একটিও নয়। তাদের পরিচয় একটিই আর সেটা হলো তারা জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতিবিদ।

কেবল ক্ষমতার লোভ, অর্থেও লোভ, বিলাসিতার লোভে অন্ধ এক প্রকার প্রজাতি। যাদেরকে আমরা ভয় পাই। যাকে মানুষ ভয় পায় তাকে কোনদিন মানুষ শ্রদ্ধা করতে পারে না। ভালোবাসতে পারে না। এই সাধারণ জ্ঞানটুকও এই সব রাজনীতিবিদদের নেই। কারণ তাদের মাঝে কেবল জৈববৃত্তি (রাজনীতিবৃত্তি) কাজ করে। বুদ্ধিবৃত্তি শব্দটা যাদের ক্ষেত্রে বিলোপ পেয়েছে।

অসুস্থ্য চিন্তা চেতনাকে যারা ধারন, বহন ও লালন করে। শুভ্র, সুন্দর, কল্যাণ ও আনন্দময় জীবন যাদের কাম্য নয়। তাদের কাম্য যে কোন উপায়ে হোক ‘ক্ষমতার শীর্ষে’ আরোহন করা। আর এই আরোহন করার জন্য তাদের যে অসংখ্য লাশকে অবলীলায় মাড়াতে হচ্ছে সেই চিন্তা বা দুঃখ বা লজ্জাটুকুও তাদের নাই।

প্রতিদিন লাশের খবর শুনতে শুনতে লাশ গণনার হিসাবও আমরা ভুলে বসে আছি। আর কত লাশ হলে থামবে এই সব অবৈধ কর্মসূচি যার সাথে আমাদের কোন প্রকার মানসিক সম্পর্ক নাই। আজ এক গার্মেন্ট শিল্পের মালিককে ফোনে হাউমাউ করে কাঁদতে শুনলাম। আজ এক অসহায় ব্যক্তি কোর্টে হাজির হতে না পারায় বিজ্ঞ আদালত তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করতে বাধ্য হলেন। কারণ সুদূর সিলেট থেকে তিনি হরতাল, অবরোধের জন্য পর পর তিন তারিখ ঢাকায় আসতে পারেন নি। আজ বিদেশে অধ্যায়নরত এক তরুণ সময়মত ফিরে যেতে না পারায় তার টিকেট পরিবর্তন তো করতে হলই পাশাপাশি তাকে অযথা বেশ কিছু টাকা গচ্ছা দিতে হলো। এখানেই শেষ নয় আরো কতকিছুর যে ঘঁন-অঘটন ঘটেই চলেছে তা বলাই বাহুল্য। আর বাচ্চা ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার কথা তো আগেই লিখেছি।

গতকাল দেখলাম এক ব্যক্তির মা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মারা গিয়েছে। কিন্তু লাশ গ্রামের বাড়িতে টেনে নিয়ে যাবার মত ঝুঁিক কোন রেন্ট-এ কারের মালিকই নিতে রাড়ি হয়নি বিধায় লাশ পড়ে আছে। মরচুয়ারিতে রাখার মত সামর্থ্য তো সবার থাকে না।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চাকুরীজীবী মহিলাটি বোধহয় আমার মতই জীবিকার তাগিদে জীবনকে উপেক্ষা করেছিলেন। আর তাই মৃত্যুকে উপেক্ষা করে কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক সন্তাসের শিকার হয়ে মৃত্যুর মাঝ দিয়েই জীবনের ঋণ শোধ করে গেলেন! তার পরিবারের কী হবে? ছেলেমেয়ের? তার হিসাবকে করবে? তবে এই দেশের রাজনীতিবিদদের হিসাব হচ্ছে কেবল কে কোন পদ পেল বা কে কত টাকা পেল!

আমার মনে হচ্ছে কফিনের ব্যবসা সামনের দিনগুলোতে আরো জমজমাট হয়ে উঠবে। তবে লাশ টানার ব্যক্তি বা দাফনের জায়গার বরাদ্দ বোধহয় আরো বাড়াতে হবে। সেলুকাস !

বাংলাদেশকে একটি তালেবানি সন্ত্রাসী জঙ্গি রাষ্ট্রে সারাবিশ্বে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্যে কেউই পিছিয়ে নেই। জাতীয়তা বোধ, দেশপ্রেম বা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পবিত্র সংবিধানের বা মানবাধিকারের ঘোষণা পত্রের একটি বাধ্যও যদি আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মগজে বা মননে থাকতো তাহলে দেশটাকে নিয়ে এই ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠতো না।

আগামী প্রজন্ম তাদের নিয়ে কী ভাবছে – সেই ভাবনাও তাদের নাই। তাদের ধারনা রাজরক্ত (বিবাহ সূত্রে ও জন্মসূত্রে) কেবল তাদের মাঝেই প্রবহমান। তাই কেবল ঘুরে ফিরে তাদেরকেই ক্ষমতায় আসতে হবে এবং থাকতে হবে। সিন্দাবাদের বুড়ো যেমন ঘাড়ে চেপে বসে আর নামেনি ঠিক তেমনিই। বংশ পরস্পরায় বাংলাদেশের রাজত্ব তাদেরই হাতে থাকবে। তারাই ক্ষমতায় থাকবে। আর আমরা সব আঁটি। নির্বাচনের পর ময়লার স্তুপে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া যায় যাদেরকে অতি সহজেই।

ক্ষমতার লোভে অন্ধ এইসব আপোষহীনদের কী নাম দেয়া যায়?

লেখক: দিলরুবা সরমিন, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী।

মতামত | সাক্ষাৎকার আরও সংবাদ

কৃত্রিম ভুলুয়া এখন রামগতি ও সুবর্ণচরের দানব

শতবর্ষী টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা

রিপোজটরি সাইট গিটহাবে বাংলাদেশী ডেভেলোপার আরমান হাকিম সাগরের কান্ট্রিবিউশন

নিবন্ধনের জন্য প্রথমদিকে আবেদিত নিউজ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন পেতে আর কত বছর?

স্বামীকে গলাকেটে হত্যা | ঘটনার এপিঠ-ওপিঠ

ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে বাংলাদেশেও জেন্ড সার্টিফাইড ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়ছে

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Chief Mentor: Rafiqul Islam Montu, Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu.
Muktijudda Market (3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794 822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com