লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর: সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আর নেই( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার রাতে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে গত ৩০ জুলাই থেকে ফুসফুসের ইনফেকশন ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হন গোলাম সারওয়ার। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ৩ আগস্ট শুক্রবার রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। তিনি সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
সমকাল জানিয়েছে, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুর পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল। নিউমোনিয়া সংক্রমণ হ্রাসের পাশাপাশি ফুসফুসে জমে থাকা পানিও কমে গিয়েছিল। হার্টও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল। কিন্তু গত রবিবার হঠাৎ করে তার রক্তচাপ কমে যায়। কিডনিও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল না। এ অবস্থায় সোমবার বিকালে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুতে দেশের সাংবাদিক ও রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গোলাম সারওয়ার (জন্ম: ১ এপ্রিল, ১৯৪৩-মৃত্যু: ১৩ আগস্ট, ২০১৮) একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশী সাংবাদিক ও কলাম লেখক। তাঁর সাংবাদিকতার জীবন শুরু হয় ১৯৬৩ সালে দৈনিক পয়গম দিয়ে। এরপর তিনি যুক্ত ছিলেন দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক সমকাল এর মত শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশের সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা এবং ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন।
১৯৪৩ সালে বরিশালে জন্ম নেওয়া গোলাম সারওয়ার ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ১৯৬৩ সালে সাংবাদিকতা শুরুর পর প্রায় দুই দশক তিনি ইত্তেফাকের বার্তা সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৯ সালে দৈনিক যুগান্তর প্রকাশিত হয় গোলাম সারওয়ারের সম্পাদনায়। ২০০৫ সালে প্রকাশিত দৈনিক সমকালেরও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তিনি।
সাংবাদিকতা
সারওয়ার ১৯৬৩ সালে দৈনিক পয়গমে যোগ দেন। এরপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত দৈনিক সংবাদে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে কিছুদিন প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ইত্তেফাকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রধান সহ-সম্পাদক, যুগ্ম-বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক পদে কর্মরত ছিলেন।
ইত্তেফাকে দীর্ঘ দুই যুগ কর্মরত থাকার পর ১৯৯৯ সালে দৈনিক যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দৈনিক সমকাল। বর্তমানে তিনি এই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
সাহিত্য জীবন
সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিতে সুনাম অর্জন করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গন্থের মধ্যে ছড়াগ্রন্থ রঙিন বেলুন এবং প্রবন্ধ সংকলন সম্পাদকের জবানবন্দি, অমিয় গরল, আমার যত কথা, স্বপ্ন বেঁচে থাক উল্লেখযোগ্য।
অন্যান্য[সম্পাদনা]
সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি সেন্সর বোর্ডের আপিল বিভাগের সদস্য এবং সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি একাধিকবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
মৃত্যু[সম্পাদনা]
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ
- ছড়াগ্রন্থ
- রঙিন বেলুন
- প্রবন্ধ সংকলন
- সম্পাদকের জবানবন্দি
- অমিয় গরল
- আমার যত কথা
- স্বপ্ন বেঁচে থাক
0Share