ঢাকার গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত নটরডেম কলেজের মেধাবী ছাত্র নাঈম হাসানকে কবর দেয়া হয়েছে লক্ষ্মীপুরের গ্রামের বাড়ির কবরস্থানে। বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে জেলার রামগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব কাজীরখিল এলাকায় জানাজা ও দাফন কাজে এলাকার হাজার মানুষ অংশ নেয়। এর আগে বুধবার গাড়িচাপায় তার মৃত্য হয়। পরিবারের দাবি নাঈমের কবরের মাধ্যমে বিচারক হতে চাওয়া একজন স্বপ্নবাজের কবর রচিত হলো।
রামগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব কাজীরখিল গ্রামের অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ শাহ আলম দেওয়ানের দুই ছেলে মধ্যে নাঈম হাসান ছিল ছোট। তার বড় ভাই মুনতাসির মামুন বাংলাদেশ ইউনিভার্সসিটি অব প্রফেশনালে একাউন্টি বিষয়ে স্নাতক সম্মানে পড়ছেন।
পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জন্মের পর নানার বাড়ি ভাদুর ইউনিয়নের সমরেশপুর গ্রামে বাড়িতে থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে। পূর্ব কাজীরখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনী এবং পরে ঢাকার গভমেন্ট ল্যাবরেটরী হাই স্কুল থেকে জেএসসি এবং এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীন হয় সে।
শুক্রবার সকালে নাঈমের বড় মামা ও কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফারুক আহমেদ জানান, আমাদের ইচ্ছে ছিল সে ভবিষ্যতে চিকিৎক কিংবা প্রকৌশলী হবে। সেজন্য এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে তাকে ভর্তি করা হয়। কিন্ত তার প্রবল ইচ্ছে ছিল সে ভবিষ্যতে একজন বিচারক কিংবা আইন অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হবে। সে কারণে তার স্বপ্নকে প্রধান্য দিয়ে এসএসসি পাশের পর নটরডেম কলেজের মানবিক বিভাগে ভর্তি করা হয়। তিনি আরো জানান, আইনকানুন নিয়ে সবসময় নাঈমের আগ্রহ ছিল প্রচুর। কিন্তু একজন অদক্ষ চালকের গাড়িচাপায় আইন অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাওয়া একজন স্বপ্নবাজ তরুণের স্বপ্নের করুণ সমাধি দেখলো দেশবাসী।
ছোট মামা রামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক ফয়েজ আহমেদ জানায়, তার দুলা ভাই শাহ আলম দেওয়ান সেনাবাহিনী থেকে ২০০০ সালের দিকে অবসর নেয়ার পরপরই ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায় বই ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা ও দুই ছেলের পড়ালেখার জন্য তিনি কামরাঙ্গীরচরের জাওলাহাটি এলাকায় বসবাস করছেন। প্রতিদিন বাসায় থেকেই কলেজে আসা যাওয়া করতো নাঈম। ঘটনার দিন সে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিল।
নাঈমের বড় মামা এ প্রতিবেদকে বলেন, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন একজন গাড়ি চালক কিভাবে সিটি করপোরেশনে চাকুরী করে? এটাকে দূর্ঘটনা না বলে স্পষ্ট হত্যাকান্ড বলেও দাবী করেন তিনি। এ হত্যার জন্য চালকের শাস্তি দাবীর পাশপাশি অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন লোককে সিটি করপোরেশনে চাকুরী দেয়ার জন্য সিটি করপোরেশন থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চান তারা। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে।
অন্যদিকে নাঈমের বাবা ছেলের স্মৃতি রক্ষার্থে ও নিরাপদ সড়কের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গুলিস্তানের ওই সড়কটির নামকরণ নাঈম হাসানের নামে চাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে গুলিস্তান মার্কেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাঈম গুরুতর আহত হয়। পরে পথচারীরা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
0Share