লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু (নৌকা) প্রতীকে ১ লাখ ২০ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী জাতীয় পাটির প্রার্থী মোঃ রাকিব হোসেন লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৮শ ৪৬ ভোট। নির্বাচনে আরো প্রতিদ্বন্ধিতা করে জাকের পার্টি ২১শ ২৬ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির প্রার্থী ৫শ ১৩ ভোট পেয়েছেন। আসনটিতে ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৪৪ জন ভোটার ছিলেন। যার মধ্যে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬শ ১২ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে বলে জানান, নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন।
রাত ৮ টায় লক্ষ্মীপুর টাউন হলে তিনি ফলাফল ঘোষণা করেন। এসময় তিনি জানান শতকরা ৩১ দশমিক ৮৫ ভোট পড়েছে।এদিকে রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ১১৫ টি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত চোখে পড়ার মতো ছিল না। কয়েকটি কেন্দ্রে ১৫-২০ মিনিট পর পর দুই-একজন করে ভোটারকে ভোট দিতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে মধ্য বাঞ্চানগর এনআহমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পৌর শহীদ স্মৃতি একাডেমী, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পৌর লাহারকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়, আলিয়া মাদ্রাসা, ভবানীগঞ্জের পিয়ারাপুর শহীদ মাজহারুল মনির উচ্চ বিদ্যালয়, ভবানীগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, লাহারকান্দির আবিরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আবিরনগর এনায়েতপুর মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, তেওয়ারীগঞ্জের পূর্ব চরমনসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। ভোট কেন্দ্রগুলো ছিলো পুরোপুরি নিরুত্তাপ।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ উপনির্বাচনে ভোটাররা আগ্রহী ছিলেন না বলে দাবি করে আওয়ামী লীগের ৩-৪ জন সিনিয়র নেতা।
কম ভোটার উপস্থিতির মাঝেও জাল ভোট, কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়ম, বলপ্রয়োগ ও এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ রাকিব হোসেন এবং জাকের পার্টির প্রার্থী শামছুল করিম খোকন ভোট বর্জন করেছেন। রোববার (৫ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর প্রেস ক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলন করে তারা ভোট বর্জন করেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ রাকিব হোসেন বলেন, সকাল থেকে আমি বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে দেখেছি আমার কোন এজেন্ট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এসময় তিনি প্রায় ১৫টি কেন্দ্রের নানা অনিয়ম তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র বাচ্চা ছেলে মেয়ে ভোট দিতে দেখেছি। যাদের ভোটার হওয়ার বয়সই হয়নি। আমরা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছি বাহিরে ভোটার নেই কিন্ত একএকটা বুথে গিয়ে দেখেছি ১৪০/১৫০ জন ভোট দিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থায় আমি ভোট বর্জন করলাম।
শামছুল করিম খোকন বলেন, আমি খবর পেয়েছি পূর্বাঞ্চলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা এক একজন ১০/১৫ করে ভোট দিয়ে বাক্স ভর্তি করেছে। সাধারণ ভোটরদেরও তারা ভোট কেন্দ্রে আসতে দেয়নি। এসময় তিনি বলেন শহরের শহীদ স্মৃতি একাডেমি কেন্দ্রের ভিতওের গিয়ে আমি দেখেছি একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রচুর জাল ভোট পড়েছে। বিভিন্ন কেন্দ্রে বাহিরের পরিবেশ ঠিক রেখে ভিতরে জাল ভোট দিচ্ছে। আমার ৩৬ জন এজেন্টকে কেন্দ্রেই ঢুকতে দেয়নি। এ অবস্থায় আমি ভোট বর্জন করলাম।
এদিকে ভোট বর্জনের বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, ভোটগ্রহণে প্রক্রিয়া সম্পুর্ণ সুষ্ঠু হয়েছে। কোথাও কোন প্রভাব খাটানো হয়নি। জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থীর অভিযোগ সত্য নয়। কারণ ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আমরা সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় সচেতন ছিলাম।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোন ধরণের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থী কি অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন তা আমাকে জানাননি তারা। ভোট বর্জনের বিষয়টিও আমি গণমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে ভোটকেন্দ্র ভিত্তিক ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহারে প্রায় ১ হাজার পুলিশ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেছেন। কোথাও কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান বলেন, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তায় ১৬ জন ম্যাজিষ্ট্রেট, ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ৭ প্লাটুন র্যাব দায়িত্ব পালন করেছেন। ৩ নভেম্বর থেকে বিজিবি মোতায়েন ছিল নির্বাচনী এলাকায়। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল মারা যান। ৪ অক্টোবর আসনটি শূন্যসহ তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এ আসনের ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
0Share