বিবিসি বাংলা/ প্রত্যুষা/১২ নভেম্বর ২০১৭: বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষের সুরক্ষার লক্ষ্যকে সামনে রেখে আজ (১২ নভেম্বর ২০১৭) প্রথমবারের মত ১২ই নভেম্বরকে উপকূল দিবস হিসাবে পালন করবে বেসরকারি কয়েকটি সংগঠন। ১৯৭০ সালের এই দিনটিতেই হয়েছিল প্রলয়ংকরী এক ঘূর্ণিঝড়, যাতে অন্তত ৫ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। ভোলা, পটুয়াখালী, সন্দ্বীপ, ফেনীসহ উপকূলবর্তী ১৫ জেলার ৩২টি উপজেলা আজ এ নিয়ে নানা ধরণের কর্মসূচি পালন করা হবে। বিবিসি: উপকূলের জনজীবনে ঘূর্ণিঝড় কতটা অভিশাপ হয়ে আসে: এমন প্রশ্নই রেখেছিলাম ভোলা জেলার দক্ষিণের একটি জনপদ চর কুকরিমুকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসেম মহাজনকে। হাসেম মহাজন: ’৭০-এর ১২ই নভেম্বর আমাদের জন্য অভিশাপ। এই দিনটি আসলে আমাদের উপকূলের মানুষ আঁতকে ওঠে। কেননা, একটা প্রজন্মকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। ওই ’৭০-এর পরে এলাকায় পুরুষ ছিলেন; নারী ও শিশুরা ছিলেন না। বয়ো:জ্যেষ্ঠদের কাছে আমরা জানতে পেরেছি, বিভিন্ন হাটে সপ্তাহে একদিন হাট বসতো তখন। ওই হাটে বিভিন্ন স্থানের মহিলাদের আনা হতো বিবাহের জন্য। এই যে একটি ট্রাজেডি, এই জন্যই আমরা মনে করি, এটা একটা অভিশাপ। বিবিসি: বছরের এই সময়টিতে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড় দেখা দেয়, তো সেটাকে কেন্দ্র করে উপকূলবাসীদের কী আলাদা কোন প্রস্তুতি থাকে? হাসেম মহাজন: আমাদের প্রস্তুতি মোটামুটি থাকে। বিভিন্ন সিগন্যাল বা গণমাধ্যম এগুলোর ওপর নির্ভর করে আমরা চরাঞ্চলের প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। আসলে ’৭০-এ মূলত কোন প্রস্তুতি ছিল না।
এ থেকেই আমরা এখন প্রস্তুতিটা নেই। বিবিসি: স্থানীয় পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় কিংবা এ ধরণের বড় দুর্যোগ মোকাবেলায় কতটা অগ্রগতি হচ্ছে? হাসেম মহাজন: অগ্রগতি ভালো হচ্ছে। কেননা, এখন বর্তমান বিশ্বের আধুনিক গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটালাইজেশনের যুগে তাৎক্ষণিক সংবাদটা আমাদের কাছে চলে আসে। সে কারণে পূর্বের তূলনায় আমরা খবরটা পাই। বিবিসি: এই যে মাধ্যমগুলোর কথা বললেন, এগুলো কী আগাম বার্তা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করেন? হাসেম মহাজন: না, এগুলো যথেষ্ট নয়। এগুলো আরও সময়োপযোগী এবং চরাঞ্চল ভিত্তিক ডেভেলপ করা উচিত এবং চরাঞ্চল ভিত্তিক ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বে আগাম বার্তা প্রেরণ অপ্রতূল। এটাকে আর গতিশীল করা উচিত। মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া উচিত। বিবিসি: ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে অনীহার কথা শোনা যায়। সে ক্ষেত্রে সচেতনতা কতখানি বেড়েছে, কিংবা আরও কীভাবে সেই সচেতনতা বাড়ানো যায়? হাসেম মহাজন: আমরা বিগত দিনগুলোতে দেখেছি, যেটা ৭০-এর পরে ৯১ কিংবা বিভিন্ন সময়ের ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তব যেটা দেখেছি যে, মানুষকে সাইকোন শেলটারমূখী করতে আমরা ব্যর্থ হই। এর কারণ হচ্ছে, সচেতনতার অভাব। প্রান্তিক জনগনের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ঘরে কিছু সম্পদ থাকে, এগুলোর মায়ায় তারা ঘর ছেড়ে যাচ্ছে না। তরুণদের মধ্যে এবং সকল জনগনের মধ্যে আরও সচেতনতামূলক সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি, আধা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এনজিও মিলে উপক‚লে কাজ করা উচিত বলে মনে করি। আমাদের দেশে অনেক দিবস পালিত হয়। যদি আনুষ্ঠানিকভাবে উপকূল দিবস ঘোষণা করা হয়, এবং গ্রামীণ জনপদে আমরা যদি ঘটা করে দিবসটি পালন করতে পারি, তাহলে এখনকার এই প্রজন্ম জানতে পারবে যে আসলে ৭০-এ কী হয়েছিল। আমাদের যারা বয়ো:জ্যেষ্ঠ আছে, তারা স্মৃতিচারণ করতে পারবেন। জনগন আরও সচেতন হতো।
0Share