সব কিছু
facebook lakshmipur24.com
লক্ষ্মীপুর বৃহস্পতিবার , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১৯৭০ থেকে ৫৪ বছরের ঝড়ে উপকূলে অন্তত ১২ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়

১৯৭০ থেকে ৫৪ বছরের ঝড়ে উপকূলে অন্তত ১২ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়

১৯৭০ থেকে ৫৪ বছরের ঝড়ে উপকূলে অন্তত ১২ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়

সানা উল্লাহ সানু: অনন্য ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে প্রায়শই বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে শিকার হয়। ইতিহাসের সবচেয়ে বিধ্বংসী রেকর্ডকৃত প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে উচ্চ প্রাণহানি ছিল বাংলাদেশে। ১৯৭০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গত ৫৪ বছরের ঝড়ে বাংলাদেশের উপকূলে অন্তত ১২ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা(ডব্লিউএমও), আর্ন্তজাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং বিভিন্ন গ্রন্থসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২শ বছরের ইতিহাসে পৃথিবীতে প্রলয়ংকরী ও প্রাণহানি ঝড়ের তালিকা তৈরি করেছিল জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা(ডব্লিউএমও)। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তালিকায় পৃথিবীর সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী ঝড় হিসেবে তালিকার প্রথমে রয়েছে ১৯৭০ সালে বর্তমান বাংলাদেশে সংঘঠিত ঝড় “ভোলা সাইক্লোন”।

২০১৭ সালের ১৮ মে প্রকাশিত ডব্লিউএমও’র তথ্য বিবরণী থেকে জানা গেছে, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর আঘাতহানে মহাপ্রলয়ংকরী ঝড় “ভোলা সাইক্লোন’’। ২২৪ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন ঝড়টি বর্তমান বাংলাদেশের সাবেক ভোলা জেলা, সাবেক নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং চট্টগ্রাম জেলাসহ দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায়।

ওই ঝড়ের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তৎকালীন সময়ের বিশ্বব্যাপি বহু মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। তথ্য সংরক্ষণের বিশ্বব্যাপি নির্ভরযোগ্য ওয়েব সাইট আর্কাইভ ডটঅর্গ এ সেসময়ে প্রকাশিত বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি প্রিন্ট কপি রয়েছে। ঝড়ের ৫ দিন পর ১৯৭০ সালের ১৮ নভেম্বর বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার ওই সংখ্যাটির শিরোনাম ছিল “ডেথ টোল অফ ওয়ান মিলিয়ন’’। অর্থাৎ মৃতের সংখ্যা ১০ লাখ। প্রতিবেদনে আরো বলা হয় বাংলাদেশের পুরো উপকূলে ক্ষতি হয় ৮৬.৪ হয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সম্পদ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নিজের লেখা “বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’’ বইয়ের ২৯৭ পৃষ্ঠায় ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ঝড়ের কথা লিখেছিলেন। সে বইতে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) তাদের ওয়েবসাইটে ১৯৭০ এর ঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লাখ উল্লেখ করে।

বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্র(বিডিপিসি) এর প্রকাশিত গ্রন্থ ‘‘দূর্যোগ কোষ’’ সূত্রে জানা গেছে এতে শুধু মৎস্যজীবি মারা গেছে ১ লাখ ৬১ হাজার। আবহাওয়া বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়েদার ও হারিকেন সায়েন্স জানায়, ভোলার তজিমুদ্দিনে উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।

‘‘দূর্যোগ কোষ’’ সূত্রে জানা গেছে ১৯৭০ সালে ১০ লাখ মৃত্যুও পর ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আঘাত হানা আরো ২১টি ঝড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ছিল। সেগুলোতে ১লাখ ৭৪ হাজার ৯৫ জন উপকূলবাসী নিহত হয়েছেন। তবে রেডক্রস সূত্র জানা গেছে সে সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যাবে। সবমিলে ১৯৭০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত ৫৪ বছরে বাংলাদেশের উপকূলে অন্তত ১২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ২য় সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী প্রানঘাতি ঘূর্ণিঝড় হয় ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। এতে ১ লাখ ৫০ হাজার উপকূলবাসী নিহত ও নিখোঁজ হন। মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে ৩য় ঝড়টি ছিল ১৯৮৫ সালের মে মাসে। এত ১১ হাজার ৬৯ জন মানুষ নিহত হন।

দূর্যোগ কোষে দেয়া তথ্যে দেখা গেছে ১৯৭০ সাল থেকে পরবর্তী ৭টি নভেম্বর মাসে ১২ হাজার উপকূলবাসী প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ১৯৭৪ সালের ২৪ নভেম্বর ২শ, ১৯৮৩ সালে ৫ নভেম্বর ৩শ, ১৯৮৬ সালের ৮ নভেম্বর ২শ, ১৯৮৮ সালের নভেম্বর মাসে ৫ হাজার ৭শ ৮ জন, ১৯৯৫ সালের ২১ নভেম্বর ৬শ ৫০ এবং ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে ৪ হাজার ৪শ ৯ জন উপকূলবাসী নিহত হন।

অন্য যেসব ঝড়গুলোর মধ্যে, ১৯৭৪ সালের ১৩ আগষ্ট ৬শ, ১৯৯৪ সালের ২৯ এপ্রিল ৪শ, ১৯৮৩ সালে ১৪ অক্টোবর ১শ ৯৩ জন, ১৯৯৪ সালের ২৯ এপ্রিল ৪শ, ১৯৯৭ সালের ১৬ মে ১২৬ জন, ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর ১৫, ২০০৯ সালের ২৫ মে ১৯০ জন, ২০১৩ সালের ১৭ মে ১৭ জন, ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই ১৩২ জন, ২০১৬ সালের ২১ মে ২৬ জন, ২০১৯ সালের ১২ মে ৬, ২০২০ সালের ২০ মে, ২০২২ সালের ৩৫ জন উপকূলবাসী নিহত হন।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঝড়ের পর বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতিতে মিতালী ক্লাব নামের একটি সামাজিক সংগঠন ঝড়ের পর উদ্ধার, ত্রাণ কাজ, ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় এবং বিদেশি সাংবাদিকদের তথ্য প্রদানের জন্য চালু করেছিল মিতালী ইনফরমেশন সেন্টার। এ সেন্টারের পরিচালক ছিলেন বর্তমান বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (ডরপ)র নির্বাহী পরিচালক এএইচএম নোমান। তিনি জানান, নোয়াখালীর উপকূলীয় সব জেলাতেই ঝড় আঘাত হানে। বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি বিভিন্ন চরাঞ্চলে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। আমাদের ক্লাবের উদ্যোগে একটি জরিপ পরিচালিত হয়।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটি(সিপিপি)র রামগতি উপজেলা টিম লিডার মোঃ মাইন উদ্দিন খোকন জানান, ১৯৭০ সালের পর ৫৪ বছর যাবত দেখে আসছি আমাদের উপকূল অনিরাপদ।

“সাইক্লোন ভোলা”র মৃতদেহ উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছিলেন কৃষক ওলি আহমেদ। তিনি জানান, ১২ নভেম্বরের পর কত লাশ উদ্ধার ও দাফন করেছি তার কোন হিসেবে নেই। শত শত লাশ কবর দিতে হয়েছে।’ এতবড় একটা সাইক্লোন পরবর্তী প্রাণহানি এবং ধ্বংসযজ্ঞের পর সরকারের কোনো উদ্যোগ ছিল না।

উপদ্রুত অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগ না থাকলেও বিভিন্ন সময় অনেক সংগঠনের উদ্যোগে ১২ নভেম্বরকে শোকের সঙ্গে স্মরণ করা হয়। উপকূলে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন কোস্টাল জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক ২০১৭ সাল থেকে এদিনকে উপকূল দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ১৯ জেলায় পালন শুরু করছে। সংগঠনটি এই দিনটিকে জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক ভাবে উপকূল দিবস ঘোষণা করার দাবি জানান।

কোস্টাল জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু বিশ্বের ১শ প্রভাবশালী জলবায়ু যোদ্ধার তালিকায় তার নাম এসেছে। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ধ্বংসযজ্ঞকে কেন্দ্র করে উপকূলের জন্য একটি পৃথক দিবস থাকলে উপকূলবাসীর মধ্যে প্রাকৃতিক দুযোর্গ নিয়ে সচেতনতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। জলবায়ু পরির্বতনের ফলে বাংলাদেশ যে ঝুঁকিতে আছে তা আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে বোঝানো সম্ভব হবে।’এ অঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়গুলো সবার নজরে আসবে।

আগে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনের নামকরণ হতো না। ২০০০ সাল থেকে ঝড়ের নামকরণের জন্য নিয়ম বানানো হয়৷ তাতে ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন ও ইউনাইডেট নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়ার সদস্য দেশগুলি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া শুরু করে৷ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আছে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড৷ সব দেশের কাছ থেকে ঝড়ের নাম চাওয়া হয়৷ তার থেকে দেশ প্রতি ৮টি করে নাম বাছাই করে মোট ৬৪টি ঝড়ের নামকরণ করা হয়৷

প্রতিবেদন আরও সংবাদ

৩ মাস পরেও সুজনের শরীরে রয়েছে ৭ বুলেট, চিকিৎসা বন্ধ

ভুলুয়া নদীর জলাবদ্ধতা নিয়ে লক্ষ্মীপুর সরব হলেও নিরব কেন নোয়াখালী ?

মেঘনা নদীতে বেপরোয়া জলদস্যুরা; এক মাসের ব্যবধানে অন্তত ২৫ জাহাজে ডাকাতি

এক মেশিনেই ৮০ রোগের চিকিৎসা দেন রায়পুরের আবু তাহের সিদ্দিক !

লক্ষ্মীপুরের নারী ও কিশোরীদের হাতে তৈরি ৫কোটি টাকার টুপি রপ্তানি হয় মুসলিম বিশ্বে

লক্ষ্মীপুর থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত মেঘনা নদীতে ১৬ চর | কমেছে ইলিশ; নদীপাড়ের মন্দার প্রভাব

লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ে অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রকাশনার নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত, তারিখ: 9/12/2015  
 All Rights Reserved : Lakshmipur24 ©2012- 2024
Editor & Publisher: Sana Ullah Sanu
Ratan Plaza(3rd Floor), ChakBazar, Lakshmipur, Bangladesh.
Ph:+8801794822222, WhatsApp , email: news@lakshmipur24.com