জুনায়েদ আহমেদ | গত ১২ এপ্রিল ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের ব্যানারে সভাপতির নাম না থাকায় তিনি শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে চরম অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। যা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
এছাড়া অভিযোগের চিঠিতে সভাপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, কথায় কথায় বহিরাগতদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা, নিয়োগ বাণিজ্যের চেষ্টা, বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ আনা হয়।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিজবুল বাহার রানা বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামের মানিক বাড়ির বাসিন্দা এবং কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্বে রয়েছেন।
তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র সূত্রে এমনটি জানা গেছে। লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন, গভর্নিং বডির অপর ১১জন সদস্য। অভিযোগপত্রে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শৃঙ্খলা ও লেখাপড়ার পরিবেশ ফেরাতে তারা সভাপতি পদ থেকে হিজবুল বাহার রানার অপসারণ দাবি করেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘ সময় ধরে বশিকপুর স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের জন্য স্থানীয় লোকজন, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। তাদের সাথে একাত্ম ঘোষণা করেন, বর্তমান সভাপতি হিজবুল বাহার রানা। পরে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে গভর্নিং বডির সভাপতির পদ পান।
এতে শুরু থেকেই তিনি বহিরাগত লোক নিয়ে কলেজে মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যক্ষ নুরুল হুদা বকুলের চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে প্রতিষ্ঠানে ২৯ বছর ধরে কর্মরত সিনিয়র শিক্ষক আবদুল বাছেদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের জন্য তিনি একটি বিজ্ঞপ্তি ছাড়েন। যা বহুল প্রচারিত পত্রিকায় না দিয়ে নামসর্বস্ব একটি পত্রিকায় ছাপা হয়। ফলে বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি কেউ অবগত হয়নি। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে এমন পাঁয়তারা করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এনিয়ে কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে তার হট্রগোল দেখা দেয়।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ তুলে অভিভাবক সদস্য এবং স্থানীয়রা কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অপর সদস্যরা। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তদন্ত প্রতিবেদন দৃশ্যমান হয়নি।
লিখিত অভিযোগে আরো বলা হয়, বিভিন্ন প্রকার হুমকি দিয়ে সভাপতি প্রতিষ্ঠান থেকে রেজুলেশন বই ও গুরুত্বপূর্ণ নথি বাহিরে নিয়ে যান। তিনি শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয়দের সাথে সব সময় অসৌজন্যমূলখ আচরণ করেন। ফলে সভাপতি হিসেবে হিজবুল বাহার রানার ঔদ্ধত্তপূর্ণ আচরণের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব ধরনের অভিযোগ ষড়যন্ত্র দাবি করে হিজবুল বাহার রানা বলেন, শিক্ষা বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি তা মেনে নিবেন। অন্যদিকে রেজুলেশন বই তার কাছে রাখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্ন করলে তিনি বইয়ের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, রেজুলেশান বই থাকবে প্রতিষ্ঠানে, এটি কারো কাছে রাখার কোন ভিত্তি নেই।
পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, প্রতিষ্ঠান প্রধানকে হুমকি দেয়ার বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন এসপি।
জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
99Share