সারোয়ার মিরন: রামগতি উপজেলায় গতো কয়েক মাস ধরে বাড়ছে চুরির ঘটনা। প্রায় দিনই কোন না কোন এলাকায় বা বাড়িতে ঘটছে ভয়ংকর সব চুরির ঘটনা। গভীর রাতে ঘরের ঘুমন্ত সদস্যদের নাকে মুখে নেশা জাতীয় দ্রব্য ছিটিয়ে বা শুকিয়ে অচেতন করে চুরির ঘটনা ঘটছে। বেশ কয়েক জনের চোরের দল এসব চুরির ঘটনার সাথে জড়িত। আর এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের। অত্যন্ত সুকৌশলে রাতের প্রথম দিকে এসব শিশুদের তাদের ঘরে ঢ়–কিয়ে রাখা হয়। এরপর গভীর রাতে ঘরের দরজা খুলে দিয়ে চুরির কর্ম সম্পাদন করে থাকে। দরজা খোলার পর প্রথম কাজ হলো নেশা জাতীয় স্প্রে ছিটানো হয় ঘুমিয়ে থাকা বিভিন্ন সদস্যের নাকের কাছে। এর ফলে সবাই অচেতন থাকে বেশ কিছু সময়ের জন্য। আর এ সময়ের মধ্যেই কাজ সেরে ফেলে চোরের দল।
বাসা বাড়ি বা ঘরে চুরির জন্য ব্যবহার করে অভিনব সব পদ্ধতি। সন্ধ্যা রাতে কৌশলে খাবারের সাথে মিশিয়ে দেয়া হয় নেশা জাতীয় উপাদান। খাবারের পর সবারই অচেতন বা ঘুমিয়ে পড়লে চুরির ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।
গতো বছরের ড়িসেম্বর মাসে রামগতি পৌরসবার নয় নং ওয়ার্ড় সভাপতি নিজাম উদ্দিনের আধা পাকা ঘরে ব্যাপক চুরির ঘটনা ঘটে। কে বা কারা কৌশলে খাবারের সাথে নেশার উপকরন মিশিয়ে দিলে পরিবারের সদস্যরা অচেতন হয়ে পড়ে। আর এরই ফাঁকে চোরের দল ঘরে ঢুকে মূল্যবান জিনিসপত্র মালামাল স্বর্নালঙ্কার ও নগদ টাকা নিয়ে যায়।
বছরের শুরুতেই আবারো একই ওয়ার্ড়ের ব্যাংক কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিনের পরিবারেও দুধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। চোরের দল নগদ টাকা ও স্বর্নালংকার সহ গুরুত্বপূর্ন বেশ কিছু কাগজপত্র ও দলিল দস্তাবেজ নিয়ে নিয়ে যায়। অচেতন অবস্থায় তার ছোট ভাই হেলাল (২৮) কে পুকুরের পানিতে ফেলে দিলে গুরুতর আহত হয় সে। এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি পরিবারের বেশ কয়েকজন সমস্য।
সর্বশেষ গতো শুক্রবার দিবাগত রাতে বড়খেরী ইউনিয়নের হাজী জসীম উদ্দিন এবং প্রবাসী ইব্রাহিমের রাড়িতে একযোগে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, বিশ পচিশ জনের একটি ডাকাত দল জসীম উদ্দিনের বসত ঘরে হামলা চালিয়ে অন্তত চার লাখ টাকা নগদ এবং পাচ ভরি স্বর্নালংকার নিয়ে যায় ডাকাত দল। অপরদিকে ইব্রাহিম ঘর থেকেও প্রায় পাছ ভরি স্বর্নালংকারসহ বেশ কয়েটি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে যায়।
চুরি করার আগে টোকাই বা ভিক্ষুক সেজে বিভিন্ন ধরনের তথ্য নিয়ে যায় তারা। কিভাবে কি করতে হবে অথবা কিভাবে কাজ সহজ হবে তা অনুমান করা হয় এদের মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রে এ কাজে সহায়তা করে এলাকার চিটকে চোর বা নেশাখোর অথবা জুয়াড়িরা। সোর্স হিসেবে ব্যবহার করা হয় শিশুদেরও।
সোনাপুর টু আলেকজান্ডার রোড়ের বিভিন্ন স্থানে রাতের বেলায় ডাকাতির শিকার হয় অনেক যাত্রীরা। হানিফ রোড় থেকে হাজিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তা বেশ ঝুকিপূর্ন বলে জানা গেছে। পনের কিলোমিটার রাস্তার এ স্থানে বেশ কিছু জায়গা নির্জন ও জনমানবহীন থাকায় ডাকাতের দল এ স্থানটিকেই বেছে নেয় ডাকাতির জন্য। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সিএনজি চালিত অটোরিকসা গুলো ডাকাতদের টার্গেটে পরিনত হয় বেশি। অধিকাংশ সময় যাত্রী বেশে গাড়িতে চড়ে নির্জন জায়গা পেলেই দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা পয়সাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেয় ডাকাতের দল।
যাত্রী সেজে দুরে কোথাও ভাড়া নিয়ে সিএনজি অটো রিকসা চুরির একাধিক ঘটনাও ঘটেছে এ এলাকায়। পরিবেশ অনুকূল বুঝে চালককে মারধর করে সিএনজি কেড়ে নিয়ে যায় চোরের দল। এক্ষেত্রেও নেশা জাতীয় কেমিকেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে চালককে অচেতন করার জন্য। গতো ডিসেম্বর মাসে তেমনই একটি সিএনজি অটো রিকসা নিয়ে যায় রামগতি পৌরসভার চার নং ওয়ার্ডস্থ চর হাসান হোসেন গ্রামের মোহাম্মদ হাসানের।
একাধিক সিএনজি চালকের সাতে আলাপ কালে জানা যায়, সিএনজি চুরির এসব ঘটনার সাথে বড় একাধিক গং জড়িত। তবে যাত্রীর জিনিসপত্র ডাকাতিতে তারা জড়িত নন বলে জানান।
ভুক্ত ভোগীদের সাথে আলাপ কালে নিজাম উদ্দিন এবং বেলাল হোসেন জানান, দাঙ্গা হাঙ্গামার ও ঝামেলা কিংবা ভয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীকে জানাননি তারা। তারা মনে করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে এসব ডাকাত ও চোর শ্রেনীর বসবাস। আর এ কারনে অতিরিক্ত ঝামেলা এড়াতে থানায় কোন অভিযোগও করেন নি। নাম প্রকাশে আরেকজন জানান, এ ব্যাপারে প্রসাশনকে জানালেও ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস ছাড়া আর কোন ফলাফল পাওয়া যায় না।
গতো কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েকটি ছোট বড় ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটলেও আইন শৃংখলা বাহিনী কাউকে আটক বা খোয়াকৃত মালামাল উদ্বার করতে পারছে বলে জানা যায় নি। এ ব্যাপারে আইন শৃংখলা বাহিনীকে নির্বিকার থাকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
0Share