লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের বালুরটেক এলাকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে স্থানীয় একটি বখাটে গ্রুপ। প্রায় অর্ধশতাধিক কিশোর নিয়ে গঠিত এ গ্রুপের নাম ‘বড়ভাই’ গ্রুপ। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ওই এলাকার কিশোর আরমান হোসেন। গ্রুপের সদস্যরা তাকে ‘বড়ভাই’ সম্মোধন করে ডাকে। তাই কিশোর এ গ্যাংটি ‘বড়ভাই’ গ্রুপ নামে পরিচিত। এলাকার অন্য কিশোর বা তরুণরা গ্রুপের প্রধান আরমানকে ‘বড়ভাই’ হিসেবে ডাকতে হয়। তা না হলে হামলা এবং নির্যাতন করা হয় তাকে।
এলাকার বৃদ্ধ থেকে শুরু করে যুবকরা এ গ্রুপের কারনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাই ‘বড়ভাই’ গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামান করেছেন স্থানীয়রা। প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে শতাধিক লোকজন তার বিরুদ্ধে ভবানীগঞ্জের বালুরটেক এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
‘বড়ভাই’ খ্যাত আরমান হোসেনকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তার খোঁজে মাঠে নামে পুলিশ। রোববার (৬ নভেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিনসহ বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য ভবানীগঞ্জের বালুরটেক এলাকায় যান। সেখানে স্থানীয় লোকজন ও অভিযুক্ত আরমানের পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে পুলিশ। বাড়ির সামনে থাকা আরমানের আস্তানাও পুলিশ দেখে যায়।
সেখানে গ্যাংয়ের সদস্যদের ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে হাসান নামে কিশোর গ্যাং গ্রুপের এক সদস্যকে আটক করা হয়।
এদিকে পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ স্থানীয় লোকজনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘বড়ভাই’ গ্রুপসহ সকল কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
এসময় এসপি সাংবাদিকদের বলেন, ২০-২০ বছরের একটি ছেলে আরমান, বালুর টেক এলাকায় ‘টিকটক’র মাধ্যমে একটি গ্যাং তৈরী করেছে। নাম দিয়েছে ‘বড়ভাই’। সে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করতে চায়। গ্যাং দিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়। এটাকে দমন করার জন্য আমি নিজেই ঘটনাস্থলে আসি। তার পরিবারের সাথে কথা বলি। পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক নেই বললেই চলে। আমরা এ গ্যাংকে দমন করবোই। যেখানেই কিশোর গ্যাং মাথাছাড়া দেওয়ার চেষ্টা করবে, সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
বড়ভাই’ খ্যাত কিশোর আরমান হোসেন ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাদিরের ব্রীজ সংলগ্ন বাসিন্দা জহির উদ্দিনের ছেলে। ২০ বছর বসয়ী এ কিশোরের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, চাঁদাদাবি, প্রতিপক্ষের উপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। তার অন্যতম সহযোগীরা হলো- সাগর, রাব্বি, ফারুক ও রাকিব।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি কালাম নামের এক লোকের কাছ থেকে চাঁদাদাবির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘বড়ভাই’ আরমান গ্রুপের হাতে হামলার শিকার হয় দুই সহোদর। গত ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় এ গ্রুপের সদস্যরা ভবানীগঞ্জের বালুর টেক এলাকায় ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে তাদের মাথা ফাটিয়ে দেয়। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আহতরা হলেন, ভবানীগঞ্জের চরমনসা গ্রামের খাঁ বাড়ির শাহ আলম খাঁর ছেলে মো. শরীফ উদ্দিন (২৫) ও মোহন (৩০)।
হামলার সময় তারা আহতরা নুর হোসেনের টেলিকম নামে একটি দোকানে আশ্রয় নেন। সেখানেও হামলা চালিয়ে দোকানে থাকা নগদ টাকা লুটে নেয় হামলাকারীরা। এ ঘটনায় আরমান ওরফে বড়ভাইকে প্রধান করে ১১ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করে আহতদের ভাই নুরুল আলম (৪৫)।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিপন খাঁ বলেন, কিশোর গ্যাং ‘বড়ভাই’ গ্রুপের প্রধান হলেন আরমান হোসেন। মোবাইলে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে মুহুর্তেই গ্রুপের সদস্যরা একত্র হয়ে যায়। আরমানদের বাড়ির সামনে একটি বৈঠকখানা আছে। সেখানেই সবাইমিলে একত্র হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নামে। এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে মোবাইল ফোনসহ মূল্যবাল মালামাল চুরি হচ্ছে। এ গ্রুপের সদস্যরা চুরির ঘটনার সাথে জড়িত। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে চাঁদা আদায় করে। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে নির্যাতন করে তারা। বিয়ে বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে এ গ্রুপের সদস্যরা।
স্থানীয় কালাম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তার কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। স্থানীয় শরীফ ও মোহন নামে দুই ভাই বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তাদের হাতে হামলার শিকার হতে হয়েছে। তাদের দুইজনের মাথা ফাটিয়ে দেয় আরমানসহ ‘বড়ভাই’ গ্রুপের সদস্যরা। তাদের অবস্থা এখন গুরুতর।
তিনি বলেন, বড়ভাই গ্রুপের অত্যাচারে আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। ভয়ে মুখ খুলতে পারতাম না, কখন কার উপর হামলা হয়। কিন্তু এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তাই অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমেছি।
স্থানীয় সবুজ মাঝি বলেন, বিগত ৪ মাস আগে আরমানসহ ৪/৫ জন তাদের বাড়িতে যায়। এ সময় তার ভাই আবুল বাশারের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা বিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। পরে পুলিশে খবর দিলে তাদেরকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন, আবুল কালাম, মো. আলী হোসেন, আবদুস শহীদ, পারভেজ, ফারুক, নুর আলম, রিনা আক্তার ও আফিয়া খাতুন ও মুরশিদাসহ অনেকে বাংলানিউজকে বলেন, ‘বড়ভাই’ গ্রুপের সদস্যরা দোকানে বসে আড্ডা জমায়। এলাকায় গণ্যমান্য কাউকে পরোয়া করে না। বয়স্করাই তাদেরকে মান্য করে চলতে হয়। তাদের মাদক সেবন করে, কিন্তু তাদের সামনে কেউ ধূমপান করলে তাকে অপদস্ত হতে হয়। ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি এক যুবককে বেধড়ক মারধর করেছে আরমান ওরফে বড়ভাই। এ গ্রুপটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠার পর এলাকায় চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে।
তারা জানায়, প্রায় সময় এলাকায় কোন না ঝামেলার কথা শুনি। এর কারণ হিসেবে এলাকার তরুণ বা কিশোররা আরমানকে ‘বড়ভাই’ বলে না ডাকলে তাদেরকে মারধর করা হয়। সবাই তাকে ‘বড়ভাই’ ডাকতে হবে।



 
																																					
																		 
																	 
0Share