নিজেস্ব প্রতিবেদক || লক্ষ্মীপুর টুয়েন্টিফোর..
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থানাধীন চর ফলকন ইউনিয়নে ব্যবসায়ীক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ৪-৫ বার মারামারি ঘটনায় ৫ জন আহত হয়েছে। এতে খোকন ও মোহতাসিন প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও বাকি তিনজন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফ্রেবুয়ারী) সকালে ফলকন ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের দেওয়ান মার্কেটের মোঃ খোকনের সাথে একই এলাকার মোতাসিন এর সাথে অন্যের পাওনা টাকার জন্য কথা কাটা কাটি হয়। এতে একে অপরকে গালাগালি করলে খোকন মোতাসিনকে জুতা পিটা করেন। স্থানীয়রা দুজন কে মারামারি অবস্থায় বাঁধা দিলে দুজন চলে যান। পরবর্তী সময়ে একই দিন সন্ধ্যা স্থানীয় দেওয়ান বাজারে মোতাসিনের কিছু লোকজন নিয়ে খোকনকে মারধর করে চলে যান বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা আরো বলেন, মূলত একই বাজারে তিনটি স”মিল মিশিন থাকায়, তারা আধিপত্য বিস্তারের জন্য বারবার মারামারি করে যাচ্ছে।
তারপর বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য বুবাল কে জানানো হলে তিনি দু’পক্ষকে বসার জন্য বলেন। কিন্তু তার সেই কথা না শুনে খোকন তার লোকজন নিয়ে পরের দিন মোঃ ইউসুফ বদ্দারের স’মিলে তার ভাই ও তার সন্তানদের আক্রমণ করে আবারও মারধর করেন৷ এর পর মারধরের শিকার প্রতিবন্ধী মোঃ ইউসুফ বদ্দার সহ তার দুই ছেলে শাহাদাত হোসেন ও ওমর সানি । আহত অবস্থায় তাদের সাথে আবার ও সেই দিন বিকেলে খোকনের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার পর হাসপাতালে যাওয়ার পথে ইউসুফসহ তার দুই ছেলেকে রিক্সা থেকে নামিয়ে দেশী অস্ত্র ও রড দিয়ে তাদের আক্রান্ত করেন। এতে গুরুত্ব অবস্থায় তারা লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। একজন একদিন পর সুস্থ হলে ও বাকি দুজন এখনও ভর্তি আছে। আহত ইউসুফের ছোট ছেলে ওমর সানি কমলনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
আহত প্রতিবন্ধী ইউসুফ বলেন, আমার ভাই এর থেকে খোকনের দূর সম্পর্কে একজনে কিছু টাকা পেতেন। যার কাছে টাকা পেতে তাকে না ধরে আমার অন্য আরেক ভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হাতাহাতি হয়েছে। তার পরে কেন খোকন ও মফু দেওয়ানের হুকুমে তার ছেলে জুলহাস দেওয়ান লোকজন নিয়ে আমাদের মিলে এসে কাজ বন্ধ করে দিয়ে দুই ধাপে মারধর করেন। পরে সন্ধ্যায় আমরা হাসপাতালে যাওয়ার পথে রিক্সা থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করেন।
আহত শাহাদাত বলেন, আমার চাচার থেকে কিছু টাকা পেতেন বলে শুনেছি। সেই টাকা যেই চাচার কাছে পেতো তিনি এখানে থাকেন না। যার কাছে পাবে তাকে না ধরে আমার আরেক চাচাকে তারা তাদের স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে মারধর করেন। এর পরে আমার বাবাসহ ৩ জনকে ৩ বার মারধর করেন। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ কথা বলতে ভয় পায়। এই ঘটনার সাক্ষী দেওয়াতে আমিন ব্যাপারীকে আজ (শনিবার) মারধর করেন। আমরা আগামীকাল আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
অভিযুক্ত খোকন বলেন, আমার সাথে মোতাসিনের এর টাকার বিষয়ে কথার কাটাকাটিতে হাতাহাতি হয়েছে। পরে সেই দিন রাতে কয়েকজন লোক নিয়ে তারা আমাকে মারধর করেন। এই অভিযোগ তার ভাইদের জানালে তারা এর সমাধান না করাতে তাদের স’মিল বন্ধ করে দিলাম। এবং তাদের বসতে বলেছি। এছাড়া আর কিছু হয় নি।
আরেক অভিযুক্ত মফু দেওয়ানের ছেলে জুলহাশ দেওয়ান বলেন, খোকন আমার স’মিলে কাজ করেন। তার সাথে অন্য স’মিলে ইউসুফের ভাই মোতাসিনের সাথে কথার কাটাকাটি হয়। পরে রাতে তারা খোকন কে মারধর করেন। আমরা তাদের বসতে বললে তারা বসেনি। স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান মেম্বারা এ বিষয়ে অবগত আছে। বর্তমান মেম্বার তাদের বসতে বললে তারা বসেনি। তাই মেম্বার আমাদের বলেন তাদেরকে বেঁধে মারই দিলে তারা বসবে। তাই প্রতিরোধ হিসেবে তাদের স’মিলের কাজ বন্ধ করে দি। পরে তাদের কিছু মারধর করা হয়।
মফু দেওয়ানের ভাই জসিম দেওয়ান বলেন,আমার ভাই ও তার ছেলেরা কথায় কথায় মানুষদের মারধর করেন। যে কারনে এলাকর মানুষ তাদের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে থাকেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন বাবুল মুঠোফোনে বলেন, আমাকে জানানোর পরে আমি তাদের বসার জন্য বলি। এবং আমি অসুস্থ্য থাকায় ঢাকায় চিকিৎসা করতে যাই। আমি কাউকে বেঁধে মারার কথা বলেনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। পরে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। আমি গত কাল (শুক্রবার) হাসাপাতাল থেকে বাড়িতে আসলাম। বরং মফু দেওয়ান ও তার ছেলেরা ক্ষমতার জোর দেখিয়ে নিরীহ ইউসুফ ও তার সন্তানদের কয়েকবার মারধর করেন। এবং সেই ঘটনার সাক্ষীকে ও আজ (শনিবার) মারধর করেন।
এ বিষয়ে কমলনগর থানার এসআই হাবিব বলেন, এই ঘটনায় আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিলাম এবং আসামিপক্ষে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছি। এবং আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
159Share