লোকমান হোসেন: জমি দিবেন না? সমস্যা নাই। পরে টাকাও যাবে জমিও যাবে। এখনো সময় আছে জমি দিন, টাকা নিন। যে কোন উপায়েই আমরা এখানে ব্রীকফিল্ড করবোই। এভাবেই হুমকি দিয়ে সদ্য রোপনকৃত চাষ করা ধানের চারাসহ জমি থেকে ভেকো-মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। মাটি না বিক্রি করায় ট্রলি দিয়ে ধানের জমিতে ট্রলি দিয়ে মাটিও জোর করে নিয়ে যাচ্ছে মাটিদস্যূরা।
এসব ঘটনায় ফুসে উঠেছেন রামগঞ্জ উপজেলার ৯নম্বর ভোলাকোট ইউনিয়নের দেহলা গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। বাধ্য হয়ে ৫শতাধীক গ্রামবাসীর স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি সোমবার দুপুরে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার রিজাউল করীমের নিকট জমা দেয় তারা।
স্মারকলিপিতে গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, শুধু ভোলাকোট ইউনিয়নেই রয়েছে ১১টি ইটভাটা। আর শাহারপাড়া ও দেহলা গ্রামে রয়েছে ৪টি ইটভাটা। ইটভাটার মাটি আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত দানবীয় চাকার ট্রলিতে এলাকার রাস্তাঘাট সব ভেঙ্গে গিয়ে একাকার। শুধু তাই নয়, ধুলোবালির কারনে স্থানীয় এলাকাবাসীর রোগ-বালাইও বেড়েছে কয়েকগুন। এছাড়া শাহারপাড়া গ্রামে ৪টি ইটভাটা থাকায় এলাকার মানুষের নাভিশ্বাস চরম আকার ধারন করছে। চাষের জমি ধান চাষ করতে বাধা দিচ্ছে ভাটার মালিকরা। ধানের চারা রোপন করার পরও সন্ত্রাসীদের ভয়ে ধানগাছসহ মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ মাটি বিক্রি করতে না চাইলে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাটি। বর্তমানে প্রভাবশালী একটি মহলের প্রকাশ্যে ইন্ধনে উক্ত সম্পত্তিতে রাস্তা নির্মান করে ইটভাটা তৈরির পায়তারা করে মাটিদস্যুরা। এসময় শাহারপাড়া গ্রামের কয়েকজন জমির মালিক বাধা দেয়ায় কয়েকজন বয়স্ক মানুষকেও মারধর করা হয়েছে। রামগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) ফজলুল রহমানের কাছে সৃষ্ট ঘটনায় অভিযোগ দেয়ায় হুমকি দেয়া হচ্ছে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ সরকার জানান, এভাবে মাটি কাটার কারনে জমির টপ-সয়েল নষ্ট হচ্ছে। একটি জমির টপ-সয়েল ফিরে আসতে কমপক্ষে চার বছর সময় লাগে, অন্তত চার বছর জমিতে জৈব সার ব্যবহার করলেই তবে।
রামগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) ফজলুর রহমান জানান, জোর করে ধানি জমিতে রাস্তার নির্মান ও কয়েকজনকে মারধর করার ব্যপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। পুলিশ রবিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকম রুহুল আমিন জানান, এ রকম বেআইনি কাজ কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সরকার দিনরাত পরিশ্রম করে রাস্তা নির্মান করছে, অথছ ইটভাটার ট্রলির কারনে তা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে আমি জোরালো প্রতিবাদ করেছি। নতুন ইটভাটা যেন কোনভাবেই না হয় সে জন্য আমরা কাজ করবো।
স্মারকলিপি হাতে পাওয়ার পর রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করীম জানান, ইটভাটা নির্মানের অনুমতি দেয়া হয় জেলা থেকে। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে চেষ্টা করবো যেন কোনভাবেই এখানে নতুন কোন ইটভাটা না হয়। জেলা প্রশাসক মহোদয় এ ব্যপারে আন্তরিক রয়েছেন।
0Share