সানা উল্লাহ সানু: রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, দেশের প্রত্যেক জেলায় রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, আমরা একটা উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখছি। সে দেশ তত উন্নত যে দেশ তার রেল ব্যবস্থাপনায় উন্নত। শুক্রবার (১মার্চ ) বিকালে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ২০১১ সালে আলাদা রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে। তারপর থেকে অনেক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় তিনি বর্তমান টিকেটিং পদ্ধতির আরো আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনার কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, সাড়ে ৫শ’ কোচ আসছে। এসব কোচ এলে আরো ট্রেন বাড়বে। আসনের কোনো অসুবিধা হবে না।
এদিকে রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজনের এ মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে রেলপথ বিহীন লক্ষ্মীপুরের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। অনেকে আশা করছেন যে, হয়তো এ সরকারের সময়ই লক্ষ্মীপুর জেলা রেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবে।
জানা যায়, বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলাকে স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালে রেলের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছিল। নোয়াখালীর চৌমুহনী স্টেশন থেকে ৩০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরকে রেল নেটওয়ার্ক এ আনার পরিকল্পনা করা হয়, সেই সাথে কিছু স্টেশন ও নির্ধারন করা হয়।
রাজনীতিবিদরা বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু আজও রেললাইন স্থাপন হয়নি। এ কারণে কৃষিনির্ভর এ জেলার পণ্য পরিবহনে সহজতা আসেনি। ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি সরকারের। কিন্তু এ নিয়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন রেলমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রেলওয়ের চট্টগ্রাম (পূর্বাঞ্চলীয়) চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। আবেদনে তিনি এটিকে লক্ষ্মীপুরের প্রায় ১৭ লাখ মানুষের প্রাণের দাবি উলেখ করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরে রেললাইন স্থাপনের জন্য সংশিষ্ট দপ্তরে দুটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এতে নোয়াখালীর চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুর-রায়পুর হয়ে চাঁদপুর পর্যন্ত প্রায় ৭৫ কিলোমিটার অথবা চৌমুহনী থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার লাইন স্থাপনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এরপর গত ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরসহ ৩৩টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জেলার চারটি সংসদীয় আসনের সদস্য (এমপি), জেলা প্রশাসক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। বক্তারা লক্ষ্মীপুরে রেললাইন স্থাপনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।
বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরকে নারিকেল, সুপারি, সয়াবিন ও ইলিশের রাজধানী বলা হয়। এ ছাড়া মেঘনা উপকূলীয় এ জেলায় রেকর্ডসংখ্যক ধান ও পান উৎপন্ন হয়। এসব কৃষিপণ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। সড়ক ও নদীপথে এসব পণ্য রপ্তানি ব্যয়বহুল। এ জন্য অনেক সময় কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কারখানা স্থাপন করা হলে এ জেলার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল। তিনি স্বাধীনতার পর গঠিত প্রথম সরকারেও এই এলাকার এমপি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘৭৩ সালে এ নিয়ে একবার জরিপ হয়েছে। তখন কয়েকটি স্টেশন শনাক্ত ও স্টেশনের নাম্বার নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে নানা কারণে এটি আর হয়নি। গত সংসদে আমি বিষয়টি কয়েকবার উপস্থাপন করেছি। এ নিয়ে সংসদীয় কমিটির সভায় আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু রেললাইন হয়নি।’
বর্তমান সরকার প্রতিটি জেলাকে রেল নেটওয়ার্কে আনার পরিকল্পনা করেছে। মাত্র ৩০ কিলোমিটার রেললাইনের মাধ্যমেই সম্ভব হবে লক্ষ্মীপুর কে রেলের আওতায় আনা। প্রতিদিন শত শত বাস হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর রূটে চলাচল করে। এছাড়া ভোলা জেলার মানুষ ও লক্ষ্মীপুর-ভোলা ফেরি রূটের মাধ্যমে ঢাকা হতে যাতায়াত করে। লক্ষ্মীপুর জেলায় মেঘনার তীরে একটি নৌবন্দর ও সাড়ে ৩ হাজার একর জায়গায় একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সব দিক বিবেচনায় এটি রেলের জন্য লাভজনক রূট হবে।
0Share