বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের পর থমকে গেছে জনজীবন। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এমন মুহুর্তে ভাটা পড়েছে জেলে জীবনেও। দেশে করোনা ধরা পড়ার সপ্তাহ আগে নদীতে শুরু হয় নিষেধাজ্ঞা। ফলে নদী থেকে ফেরার পর অন্য কোন কাজ করার সুযোগ হয়নি তাদের। এতে টানা দুই মাস কর্মহীন মানবেতর জীবন যাপন করেছেন প্রান্তিকের জেলেরা। তবে জেলেদের জন্য আশার খবর হচ্ছে, আজ রাত অর্থাৎ ১লা মে দিবাগত রাত ১২টা থেকে নদীতে নামছেন লক্ষ্মীপুরের জেলেরা।
নদীতে ইলিশ সুরক্ষার জন্য সরকার চাঁদপুরের ষাটনল হতে লক্ষ্মীপুরের রামগতির হাট পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আজ রাত থেকে দু’মাসের এ নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জেলেরা ছুটবেন জীবিকার সন্ধানে। মেঘনাপাড় ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে অসুবিধে হয় না, তাদের মাঝে যে এখন এক ধরণের আনন্দ বিরাজ করছে। নদীতে ইলিশ ধরবে, পেটে ভাত জুটবে।
করোনা দুর্যোগ ও নিষেধাজ্ঞার সময়ে কেমন কেটেছে মেঘনাপাড়ের জেলে জনগোষ্ঠীদের জীবন?
এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে কথা হয় লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর মার্টিনের জেলে আবুল কাশেমের(৪৫) সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘গাঙে অবরোধ দেয়ার হরে চিটাগাং গেছি সিএনজি চালানোর লাইগা। কিন্তু হরে হুনি, করোনা আইছে দ্যাশে। হিয়ারলাই আর সিএনজিও চালাইতে হারি নাই, বাড়িতে আসার হরেও কোন কাজকাম পাই নাই। এমন অবস্থায় আছি যে, কওনের মতো না। দুইদিন আগে উপাস আছিলাম। শাগ-লতা রান্না করে। আমরাতো গাঙে কাজকাম করতাম। ইলিশ মাছ খাইতাম সব সময়। এখন সব কি আর পেটে ঢুকে?’
চর কালকিনির জেলে আব্বাস মাঝির(৪৩) আলাপ হয় বাত্তির খালপাড়ে। তিনি বলছিলেন, ‘সরকার অভিযান দিছে গাঙে। আজ দুই মাসের মতো। আমাগো কোন খোঁজ খবর নাই। ভাইরাস আসার পর থেইকাতো কোন কাজই করতে পারি নাই। গাঙে মাছ ধরা বন্ধ অইলে আঁই বিভিন্ন স্থানে গিয়া গাছ কাটতাম। মোটামুটি সংসারটা চলতো। কিন্তু এহন কোন দিকেও যাওয়া যায় না, কাজ কামও কোনডা করতে পারি না। কারও কাছ থেকে যে হাওলাত বরাত করে চলমু, সেটাও পারি না। এখন কার কাছে টিয়া চামু? সবার হাত খালি। কারও হাতে কোন টিয়া নাই। এর মাঝে আমাগো খুশির খবর অইলো, আমরা আজ রাতে গাঙে মাছ ধরতে নামমু। আল্লাহই যদি দেয়, তবে পোলাপাইন নিয়া দু’বেলা ভাত খাওয়নের আশাকরি।
আব্বাস মাঝির সঙ্গে আলাপের পর দেখা মেলে ইছমাইল মাঝির। বয়সে ২৫এর গন্ডিতে। লোকজন নিয়ে নৌকার কাজ করছেন। জানতে চাই, কেমন আছেন, কি অবস্থায় আছেন? ‘আমরা আছি, কোন রকুম বাঁচি আছি। আমাগো খবর নেওয়ার মতো কেউ আছে? শুধু আমাগোরে পিটিয়ে ঘরে ঢুকানো হয়। কিন্তু ঘরে ঢুকলে যে আমাগো পেট চলে না, সেটার খবর কেউ রাখে? গাঙে অভিযানের পর থেকে আমরা অলস সময় কাটিয়েছি। অন্য কোন কাজও যে গিয়া করমু, সেটাও পারিনি। ধার-দেনা করেও যে চলমু, সেই পথও অন বন্ধ। নৌকার ভাগিদারদের নিয়া রেডি হলাম। গাঙে যামু, দেখিনা ভাঙে কি অয়।’
মেঘনাতীরর বাত্তির খাল পাড়ে দেখা মেলে আরো বেশ কয়েকজন জেলের। সবার একই দাবি, তারা কিছুই পাননি করোনা দুর্যোগে। এতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় জীবন পার করছেন তারা।
0Share