তাবারক আজাদ,রায়পুর: অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় রায়পুরের চাষিরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে। সঠিক পরিচর্যা ও কৃষি অফিসের তদারকিতে গত কয়েক বছর ভালো ফলন পেয়ে বেশ লাভ করেন পান চাষিরা। সফল
এ চাষিদের দেখে আরও অনেকে আগ্রহী হন পান চাষে। চলতি বছর উপজেলায় গড়ে তোলা হয় প্রায় আড়াই হাজার পানের বরজ। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পোকার আক্রমণে এবার পান চাষিদের কপাল পুড়েছে।
উপজেলায় অস্বাভাবিক পোকার আক্রমণে প্রাণ চলে গেছে পান থেকে। নষ্ট হয়ে গেছে চারটি ইউনিয়নের শত শত পানের বরজ। নষ্ট হওয়ার পথে রয়েছে আরও অসংখ্য বরজ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও রায়পুর ইউনিয়নের ৩১০ হেক্টর জমিতে প্রায় আড়াই হাজার পানের বরজ আছে। এসব ইউনিয়নের ৬০ শতাংশ লোক পান চাষ এবং পানের ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। একেকটি পানের বরজ তৈরি করতে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়।
সূত্র জানায়, উপজেলার পানের বাজারগুলোতে বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি পান বিক্রি হয়। এ পান জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিলা, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। অনেক পাইকারি পান ব্যবসায়ী রায়পুর থেকে পান সংগ্রহ করে নিয়ে যান। সপ্তাহের শনি ও বুধবার লক্ষ্মীপুরে সবচেয়ে বড় পান বাজার বসে হায়দরগঞ্জ এলাকায়। বিভিন্ন জেলার পান ব্যবসায়ীরা বাজার বসার আগের রাতে হায়দরগঞ্জ বাজারে জড়ো হন। এছাড়া রায়পুর পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকায় সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার পানের বাজার বসে।
এদিকে অস্বাভাবিক জোয়ার, টানা বর্ষণ ও পোকার আক্রমণে পানের বরজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপজেলার উত্তর চর আবাবিল, দক্ষিণ চর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে এখন পান চাষিদের মধ্যে হাহাকার চলছে। চাষের জন্য চড়া সুদে ঋণ কীভাবে শোধ করবেন এ চিন্তাই তারা অস্থির। চরলক্ষ্মী গ্রামের ফরহাদ হোসেন মিজি বলেন, পান চাষে এলাকার চাষিদের সফলতা দেখে অন্যান্য ব্যবসা বন্ধ করে সব টাকা দিয়ে পান চাষ শুরু করি। যখনই পান বড় হয়ে উঠছিল ঠিক তখন বৃষ্টির পানি পানের বরজে ঢুকে পড়ে। এতে আমার একটি বরজের পান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পোকার আক্রমণে নষ্ট হওয়ার পথে অপর বরজটিও।
ইন্টারনেটে কৃষি তথ্য অনুশীলন করে পান চাষ করা চরলক্ষ্মীর অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী মাস্টার আহসান উলার বরজও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অবসরে এসে ১৬ ডিং ভূমিতে দুই লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে তিনি গড়ে তোলেন পানের বরজ। সঠিক পদ্ধতি অনুশীলন করায় কিছুদিনের মধ্যেই তার বরজের পান বড় হয়ে যায়। কিন্তু অতি বৃষ্টি ও অচেনা পোকার আক্রমণে তার বরজ ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। মাস্টার আহসান উলা অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগে বিষয়টি অবহিত করার পরও তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এদিকে অভিন্ন অভিযোগ করেন স্থানীয় পান চাষি শাহ আলম, আশরাফ মিয়া, সেলিম, শাহজাহান ও ইউসুফ। তাদের অভিযোগ, পোকার আক্রমণের কথা কৃষি অফিসে জানানো হলেও কেউ আসেননি।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। সরেজমিন গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পানের বরজ দেখে পরামর্শ দেওয়া হবে।’
সচেতন মহলের মতে, উপজেলার পান চাষিরা সরকারিভাবে পর্যাপ্ত সহায়তা পায় না। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অনেকে পান চাষ করছেন। অথচ সরকারের সংশিষ্ট বিভাগ যদি পানি চাষিদের যথাযথ মনিটরিং করে তাহলে উপজেলায় পান চাষে বিপব ঘটবে। এতে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও
0Share