নিজস্ব প্রতিনিধি: ইলিশ হোক আর জাটকা হোক ধরলেই তিন,চারগুন লাভ। আর এ লাভের লোভ সামলাতে না পেরে মেঘনায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে ইলিশ শিকারীরা। এই সময়ে মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পয়লা বৈশাখ উৎসবকে সামনে রেখে অবাধে জাটকা শিকার করছে জেলেরা। মেঘনার আশপাশ এলাকার মাছঘাটগুলোতে প্রতিরাতেই বসে জাটকার হাট। এতে ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি অনেকটাই ভেস্তে যাচ্ছে। সরকার মার্চ-এপ্রিল মেঘনা নদীর চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ সময়ের জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন জেলে এ সহযোগিতা পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নববর্ষকে সামনে রেখে জেলেরা পুরোদমে মেঘনায় মাছ ধরা শুরু করেছে। রায়পুরের পুরান বেড়ি, পানিরঘাট, হাজীমারা, গুলগুইল্যা ও কানিবগার চরসহ উপকূলীয় আশপাশ এলাকার মাছঘাটগুলোতে প্রতিরাতেই জাটকার হাট বসছে। পুলিশকে ম্যানেজ করে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী জাটকার এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মৎস্য বিভাগ অভিযান চালানোর জন্য যেখানেই ডাক দেন তারা সঙ্গে থাকেন বলে জানায় পুলিশ।
পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও উপজেলার সোনাপুর, রাখালিয়া, খায়েরহাট, বামনী, বাবুরহাট, জোড়পুল, মিতালি বাজার, হায়দরগঞ্জ, খাসেরহাট, উদমারা, গাজীনগর, শায়েস্তানগর এলাকায় রিকশা ও ভ্যানে করে প্রতিদিন ভোরে জাটকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি জাটকা ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
মজুরহাট এলাকার জেলে আনোয়ার বলেন, ‘বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে সবাই ইলিশ সংরক্ষণ করছেন। তাই ইলিশের দাম খুব বেশি। বেশি লাভের আশায় জেলেরা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছেন।’
জেলে আবুল কাশেম জাটকা নিধনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ধরলেই লাভ, এ লাভ কি হাতছাড়া করা যায়। তাই জাটকা ধরছি।’
খাসেরহাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মোস্তফা বেপারী জানান, অসাধু জেলেরা নদীর পাড়ে পানির দামে জাটকা কিনে নেয়। পরে তা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে। বিশেষ করে বরিশাল অঞ্চলের জেলেরা জাটকা ধরে রায়পুরসহ আশপাশ এলাকায় বিক্রি করছে। দু’মাস নদীতে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু এ বছরের বরাদ্দ এখনো জেলেরা পায়নি।
হাজীমারা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল খালেক অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা অভিযানের ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জাটকা কম ধরা হচ্ছে। জেলেরা সচেতন না হলে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘জাটকা নিধন রোধে স্থানীয় প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এ পর্যন্ত নদীতে অনেকগুলো অভিযান চালানো হয়েছে। তবে জাটকা নিধন বন্ধ হলে ইলিশ উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের উপ-পরিচালক ড. আনিসুর রহমান বলেন, ‘জাটকা নিধনের বিষয়টি দুঃখজনক। এভাবে চলতে থাকলে ইলিশ উৎপাদন ব্যহত হবে। সবার স্বার্থেই জাটকা নিধন বন্ধ রাখা উচিত।’
0Share