শাকের মোহাম্মদ রাসেল: লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলার ১ হাজার ১২১টি ব্রয়লার ও গরু মহিষের কয়েকটি খামার থেকে বছরে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন মাংস উৎপাদন হচ্ছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৯শ’ কোটি টাকা। একই সময়ে জেলার ২৫৩টি লেয়ার মুরগির খামার থেকে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকার ডিম উৎপাদন হচ্ছে। জেলার প্রাণীসম্পদ কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।এর মধ্যে ৮১৯ টি ব্রয়লার ও ১০১টি লেয়ার মুরগি খামার রেজিষ্ট্রিকৃত।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠেছে পোল্ট্রি খামার। বেড়েছে মাংস ও ডিমের উৎপাদন। স্বল্প মেয়াদের লাভজন হওয়ায় দিন দিন ঝুঁকছে বেকার যুবক ও প্রবাস ফেরত ব্যক্তিরা। জানা যায়, অল্প সময়ে লাভজনক হওয়ায় লক্ষ্মীপুরে বাণিজ্যিক ভাবে গড়ে উঠেছে এসব পোল্ট্রি খামার।
এতে দিন দিন ঝুঁকছে অসংখ্য বেকার যুবক ও প্রবাস ফেরত ব্যক্তিরা। সাধারণত শীতকাল ছাড়া বছরের অন্যসময় মুরগির তেমন রোগবালাই হয় না। সকালে-বিকেল দু’বেলা খাবার দিলেই হয়ে যায়। ঠিক মত ভ্যাকসিন দিতে পারলে রোগবালাই মুক্ত থাকে এসময় মুরগি।
ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগিগুলো খামারের ভেতরে বিচরণ করছে। এসব খামারের কর্মরত যুবক কেউ পানি কাবার দিচ্ছে আবার কেউ ব্রয়লার খাবার পাত্রগুলো পরিস্কার করছে। কেউবা লেয়ার মুরগির ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। সদর উপজেলার উত্তর বাঞ্চানগর গ্রামের ব্রয়লার খামারি পিন্টু মিয়া বলেন, আমার ওয়ার্কশপের ব্যবসা আছে। প্রায় ৩ বছর আগে আমি পোল্ট্রি খামার দিয়েছি। অল্প সময়ে এটি লাভজনক ব্যবসা।
মুরগি লালন-পালনে বেশি সময় প্রয়োজন হয় না। সকালে-বিকেল দু’বেলা খাবার দিলেই হয়ে যায়। রোগবালাই নিধনের জন্য সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন দিলে মুরগির কোন সমস্যা হয় না। সদর তেওয়ারীগঞ্জ গ্রামের লেয়ার খামারি জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার খামারে বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজার মুরগি রয়েছে। এসব মুরগি থেকে দৈনিক ৪ হাজার ডিম পাওয়া যায়। এখানে ৬ জন কর্মচারী মুরগিগুলোর দেখবাল করে। সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রায় সময় ডাক্তার এসে মুরগির স্বাস্থ পরীক্ষা করে যান।
দক্ষিণ মান্দারী গ্রামের খামারি মো. সোহেল জানান, প্রচুর টাকা খরচ করে তিনি বিদেশ গেছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে বেশিদিন তিনি টিকতে পারেননি। সর্বশেষ তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি পোল্ট্রি শিল্পে আসেন। বর্তমানে তার মুরগির ব্যবসা ভালোই চলছে।
খামারিরা জানান, একদিনের একটি ব্রয়লার মুরগি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে কিনতে হয়। এটি বিক্রির উপযোগী হতে সময় লাগে ২৮ থেকে ৩০ দিন। বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি মুরগির পাইকারি মূল্য ১২৮ থেকে ১৩০ টাকা। একটি লেয়ার মুরগি এক থেকে দেড় বছর বয়সে ডিম দেওয়ার উপযোগী হয়। প্রতিটি ডিমের বর্তমান পাইকারি মূল্য সাড়ে ৭ টাকা।
খামারিদের অভিযোগ, পিড ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট করায় মাঝে মধ্যে খামারিদের আর্থিক ক্ষতি হয়। বাজারের মুরগির দাম বাড়ার সাথে সাথেই পিডের দামও বাড়িয়ে দেয় তারা। গত মাসে ৫০ কেজি পিডের দাম ছিল ১ হাজার ৩৬০ টাকা। আর এ মাসে মুরগির দাম বাড়ায় ওই পরিমাণ পিডের মূল্য দাড়িয়েছে ২ হাজার ৪২০ টাকা। এতে প্রায় ১ হাজার টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে খামারিকে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. যোবায়ের হোসেন বলেন, মাংস ও ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশের অন্যতম জেলা লক্ষ্মীপুর। স্বাস্থকর মাংস ও ডিম উৎপাদন করাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। এনিয়ে খামারগুলো পরিদর্শন ও খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খুব শীঘ্রই খামারীদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আগের চেয়ে এ জেলায় পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা বেড়েছে। আর এসব খামারে বেকার যুবক ও প্রবাস ফেরতরাই বেশি আগ্রহী। এর সঙ্গে ব্যাপক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে।
0Share