তাবারক হোসেন আজাদ: তালিকা অনুযাই বরাদ্দ কম আসায় লক্ষ্মীপুর জেলার প্রায় ১১ হাজার জেলে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, বরাদ্দ তালিকায়
নাম উঠাতে তাঁদের জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিতে হয়েছে। জেলায় মেঘনা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৭০২ জন। এর মধ্যে ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা পাবে ২৫ হাজার ৯৪৭ জন জেলে। বঞ্চিত হচ্ছেন ১০ হাজার ৭৫৫ জেলে। দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সুবিধা বঞ্চিত প্রায় ১১ হাজার জেলে মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণও না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জেলা মৎস অফিস সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ৪ হাজার ৭৩৩ জন জেলের মধ্যে ৩ হাজার ৩৪৫ জন। রায়পুর উপজেলায় ৫ হাজার ৯৩৮ জন জেলের মধ্যে ৪ হাজার ১৯৬ জন, রামগতি উপজেলায় ১৫ হাজার ৯২৯ জন জেলের মধ্যে ১১ হাজার ২৬৫ জন এবং কমলনগর উপজেলায় ১০ হাজার ১০২ জন জেলের মধ্যে ৭ হাজার ১৪১ জন জেলে ভিজিএফ কর্মসূচির খাদ্য সহায়তা মার্চ থেকে মে পযন্ত প্রতি মাসে সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তালিকা ও খাদ্য সহায়তা হতে বঞ্চিত হবে ১০ হাজার ৭৫৫ জন জেলে বাদ পড়েন।
জানা গেছে, নভেম্বর হতে জুন পর্যন্ত টানা আট মাস মেঘনা নদীতে জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচি চালু থাকে। এ জন্য মৎস্য ও প্রানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় প্রশাসন মার্চ, এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম করতে এ দু’মাস সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। এসময় জাটকা নিধন রোধে স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশে সহযোগিতায় এ ৮ মাস নদ-নদী ও হাট বাজারে সরকারিভাবে বিশেষ অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। মাছ ধরার ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী জেলেদেরকে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্থ কষ্টে পড়তে হয়। জেলেদের দুঃখ কষ্ট লাঘবের জন্য প্রতি জেলে পরিবারকে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় টানা চার মাস প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।
তালিকায় নাম নেই এমন কয়েকজন জেলে বলেন, মাছ ধরে তাঁরা সংসার চালান। অন্য কোনো কাজও তাঁদের জানা নেই। সরকারের নিষেজ্ঞা মানার জন্য জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে যায় না। তারা নৌকা ও জাল গুটিয়ে পাড়ে রেখে দিয়েছে। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় অনেক পরিবারে চরম বেকাদায় পড়েন। এখন না কী ভিজিএফ কর্মসূচি থেকে তাদের না বাদ পড়েছে। তাঁদের মতো এলাকার অনেক জেলেই চাল বরাদ্দ পান না। এই অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
জেলার মৎস্যজীবী ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তফা বেপারী জানান, খাদ্য সহায়তা হতে বঞ্চিত জেলেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত চরম দুর্দিনের মধ্যে থাকতে হবে। মাছ ধরা থেকে বিরত থেকেও অনেকই এখন খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন না। এছাড়াও তিনি আরও বলেন সুবিধাবঞ্চিত অনেক জেলেরা জীবন বাঁচাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে নামতে পারেন। এতে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে না। এ জন্য সব জেলের নামে চাল বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা অরবিন্দ কিশোর চক্রবর্তী জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে এ বছর ২৫ হাজার ৯৪৭ জন জেলের চার মাসের জন্য ৪ হাজার ১৫১ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলেক উজ্জামান জানান, তালিকাভুক্ত সব জেলের জন্য খাদ্য সহায়তার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। বরাদ্দ কম আসায় প্রায় ১১ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া যাবে না।
0Share