ডেস্ক: উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশ মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দেশের আট জেলায় ‘ইকো ফিশ’ নামে এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর আওতায় দেশে প্রথমবারের মতো ইলিশের বংশবিস্তার ও প্রজননকাল নির্ধারণসহ নানা দিক নিয়ে গবেষণা করা হবে। পাশাপাশি জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের
বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট আটটি জেলা হলো লক্ষ্মীপুর,বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর । মোট ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ১ মার্চ। এতে মৎস্য অধিদপ্তরকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড ফিশ’। সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় এলাকায় মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে নানামুখী কাজ করছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গবেষক ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরএকদল বিশেষজ্ঞ ২১ দিনের একটি প্রশিক্ষণ দেবেন।
সংশ্লিষ্ট জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তদারকিতে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কার্যক্রম চলবে। প্রতিটি জেলায় ওয়ার্ল্ড ফিশের একজন বিজ্ঞানী ও তিনজন সহযোগী বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে একটি দল প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন। ইতিমধ্যে আট জেলায় জেলেদের জরিপকাজ শুরু হয়েছে। বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বঙ্কিম চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ইকো ফিশ প্রকল্পের আওতায় জেলে অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রাম ভাগ করে সেগুলোতে জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মূল প্রকল্পের কাজ শুরু হতে আরও কয়েক মাস লাগবে।
ওয়ার্ল্ড ফিশের গবেষকেরা জানান, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ইলিশের বংশবিস্তার ও প্রজনন সময়কাল নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো গবেষণা হয়নি। এই প্রকল্পের আওতায় ইলিশের জীবনপ্রণালি ও অন্য বিষয় নিয়ে বড় ধরনের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ছাড়া নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার রোধে কী কী করণীয়, তা-ও চিহ্নিত করা হবে। কারণ উপকূলে চিংড়ি ও অন্য মাছ ধরার জন্য যেসব ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহৃত হয়, তাতে ইলিশের পাশাপাশি অন্য মাছ, শুশুক, বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ প্রকল্প উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীতে ইলিশের পাশাপাশি অন্য জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকাসহ অন্য ছোট মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই সময়ে সরকার চার মাস পর পর জেলেদের প্রতি পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি চাল সহায়তা দেয়। কিন্তু অর্ধেকেরও কম জেলে এই সহায়তা পান। বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সহায়তা পাওয়া জেলেরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটান। এসব বিবেচনায় নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে সংশিষ্ট জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দেবে।
প্রকল্পসংশিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, জেলে ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ২৫ সদস্যের দল গঠন করে তাঁদের ক্ষুদ্র পেশার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। খাঁচায় মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি-গবাদি পশু পালন, সবজি চাষ, কুটিরশিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা থাকবে প্রকল্পের আওতায়।
‘ইকো ফিশ’ প্রকল্পের কেন্দ্রীয় দলনেতা ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন আবদুল ওহাব গত রোববার বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় উপকূলের ইলিশ মাছ অতিমাত্রায় আহরণ থেকে রক্ষা পাবে এবং বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। ইলিশ মাছের পাশাপাশি অন্য মাছ ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা পাবে। পাশাপাশি জেলেদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
সূত্র : প্রথম আলো
0Share