নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২ হাজার ৫৪৪টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৯টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।
অর্থাৎ এই তিন জেলার ৪১ দশমিক ২৩ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৪ দশমিক ৪২ শতাংশ নোয়াখালী জেলায়। একই সঙ্গে এই ৩ জেলায় ৬১৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদও খালি রয়েছে।
এই সংকটের প্রভাব পড়ছে বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রমে। বিশেষ করে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
জেলা তিনটির প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আদালতে চলমান মামলা, শিক্ষক নিয়োগে প্রশাসনিক জটিলতা ও পদোন্নতিতে ধীর গতির কারণে এই সংকট দেখা দিয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ১ হাজার ২৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া এই জেলায় ২৩৪ জন সহকারী শিক্ষকের পদও খালি রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে ৭৩২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২২৯টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক না থাকার শতকরা হার ৪৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা ১৫৭টি।
ফেনীতে ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নেই ১২৮টি স্কুলে। জেলার ২২ দশমিক ৮৯ শতাংশ স্কুল চলছে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই। এ জেলায় ২২৩ জন সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকদের দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকদের শ্রেণি কার্যক্রম তদারকি এবং শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করাতে হচ্ছে। কোনো বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকলে এসব কাজে সংকট সৃষ্টিসহ শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।’
নোয়াখালী পুলিশ লাইনস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সহকারী শিক্ষক) অনেক সময় বিভিন্ন কাজে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খান।’ এসব স্কুলে দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান তারা।
ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মল্লিকা বেগম বলেন, ‘আমার স্কুলে ৩৪৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের পদটি প্রায় ১ বছর ধরে শূন্য। শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি আমাকে দাপ্তরিক ও তদারকির কাজও করতে হচ্ছে। এতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।’
উত্তর মাইজদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাজিয়া জানান, ৬ জন শিক্ষকের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৫ জন। তাকে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করাতে হচ্ছে। এতে তার পরিশ্রম বেশি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নোয়াখালী সদর উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক নারী প্রধান শিক্ষকবলেন, ‘প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক প্রধান হিসাবে কাজ করেন। এছাড়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদানসহ আরও অনেক কাজ করতে হয় তাদের। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম নষ্ট হচ্ছে। এতে মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।’
নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইশরাত জাহান হাবিব শিক্ষক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আদালতে মামলা থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যারা চলতি দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন, তাদের মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদিকে শিক্ষকদের মামলার কারণে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদেও পদোন্নতি ও পদায়ন করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে গোটা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাই এতে স্থবির হয়ে পড়েছে।’
সহকারী শিক্ষকদের শূন্য পদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী জানুয়ারিতে সহকারী শিক্ষক পদে দুই দফায় নিয়োগ পরীক্ষা হবে। এতে করে সহকারী শিক্ষকদের শূন্য পদগুলো কয়েক মাসের মধ্যে পূরণ হবে।’



0Share