নিজস্ব প্রতিনিধি | লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।
এ আইনের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর তারিখে ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করে তা রক্ষার রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম কারণে অধিকাংশ খাল ভরাট হয়ে গেছে। খালের দুই পাশের জমির মালিকরা নিজেদের ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি করার কারণে ঐ খালগুলোর অস্তিত্ব প্রায় বিলিন হওয়ার পথে। অতিবৃষ্টি বা অতি পানি প্রবাহে সৃষ্ট বন্যার কারণে পানি ধারণ ক্ষমতাও নেই খালগুলোর। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ইতিমধ্যে মরুকরণ দেখা যাচ্ছে। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই পরিবেশ আইনানুযায়ী জলাধারের আওতাধীন ভরাট ও বেদখল হওয়া নদী, খাল, বিল, হাওর, বাঁওড়, দীঘি, পুকুর, ঝরনা বা জলাশয়গুলো সংস্কার করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা গেলে ভবিষ্যত্ প্রজন্মের সুফল ভোগ করবে। এ সংক্রান্ত এক রিট মামলায় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেন।
হাইকোর্ট মহানগর ও বিভাগীয় শহর, জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকায় অবস্থিত ব্যক্তিমালিকানাধীন হিসেবে রেকর্ড করা পুকুরগুলো রায় পাওয়ার এক বছরের মধ্যে জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ এর ২ (চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের জন্য বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে। আদালত বলেছে, দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উম্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণের জন্য এ সংক্রান্ত জলাধার আইন সময়োপযোগী। কিন্তু পৌরসভাবিহীন প্রতিটি উপজেলা সদর ও সদর থানাকে এই আইনে অন্তর্ভুক্ত না করায় বিদ্যমান খেলার মাঠ, উম্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। ফলে স্বার্থান্বেষী মহল ইচ্ছাকৃতভাবে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে উহার প্রকৃতি ও চরিত্র পরিবর্তনের অপচেষ্টায় লিপ্ত। এজন্য বিদ্যমান সব পৌর এলাকার মতো ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য বর্তমান পৌরসভাবিহীন প্রত্যেকটি উপজেলা সদর এলাকা ও থানা সদর এলাকাকে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে তা জলাধার আইনে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের জানান, পরিবেশ আইন ও জলাধার সংরক্ষণ আইনের বিধান অনুসারে যে কোনো জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তিগত পুকুর হলেও তা জলাধারের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এটা ভরাট করা যাবে না।
২০১২ সালে বরিশাল শহরের ঝাউতলা এলাকায় প্রায় শতবর্ষী একটি পুকুর ভরাট ও দখল বন্ধে হাইকোর্টে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। ঐ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রুল জারি করে আদালত স্থিতিবস্থার আদেশ দেয়। ঐ রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ রায় দেয়। গত ৫ মার্চ দেওয়া ঐ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গতকাল প্রকাশ পেয়েছে।
0Share