সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ: উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। মেঘনাপাড়ে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা। দীর্ঘ চার দশক ধরে ভাঙছে এ জনপদ। বিলীন হয়ে গেছে ফসলী জমি, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা। ছিন্ন হয়েছে পারিবারিক ও সমাজিক বন্ধন। নিস্ব হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
তবুও যেনো রক্ষা নেই; ভাঙনের মুখে পড়ে রামগতি উপজেলা কমপ্লেক্স, আলেকজান্ডার-সোনাপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, পৌর আলেকজান্ডার শহর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ বহু সরকারি-বেসকারি স্থাপনা। এমন পরিস্থিতিতে হতাশা ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা। ঠিক তখনি ভাঙন রোধে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনী। ফিরে আসে স্বস্তি। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে রামগতির মানুষ।
জেলার রামগতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনের তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করছে। অস্বাভাবিক জোয়ার, তীব্র ঢেউ ও নানা প্রতিকূলতায় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষায় প্রাণন্তকর চেষ্টা তাদের। দিন-রাত ৫০ থেকে ৬০ জন সেনা সৈনিক উত্তাল মেঘনার সাথে যুদ্ধ করে চলেছে। এ যুদ্ধ ভিটেমাটি রক্ষার যুদ্ধ। মুখে হাসি ফুটাবার যুদ্ধ।
চলছি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ভাঙন রোধে কাজ শুরু হয়। প্রথম দিকে আলেকজান্ডার বাজার সংলগ্ন ১ কি.মি. বাঁধ নির্মানের কথা থাকে। পরবর্তীতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় ৩.৫ কি.মি. বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নেয় সেনাবাহিনী। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে মাত্র ৫ মাসে করা হয় ১ বছরের কাজ। ৬ লাখ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয় নদীতে। দেয়া হয় ব্লক। এভাবেই তৈরী হয় ভাঙন রোধের বাঁধ।
স্থানীয়রা জানায়, সেনাবাহিনী নদী ভাঙন রোধে কাজ না করলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই আলেকজান্ডার-সোনাপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, রামগতি উপজেলা কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, আ স ম আবদুর রব সরকারি কলেজ, পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আলিয়া মাদ্রাসা ও আলেকজান্ডার বাজারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যেতো। আমরা ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছি। সেনাবাহিনী আমাদের নতুন করে বাঁচতে স্বপ্ন দেখিয়েছে। অবশিষ্ট কাজও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্ন করার দাবি জানান তারা।
রামগতির স্থানীয় সাংবাদিক এলাকা রাসেল পাটোয়ারী জানান, ভাঙন থেকে মাত্র দেড় শ’ গজ দুরে ছিলো তার বসতভিটা। বাঁধ দেওয়ায় তাদের শেষ সম্বল রক্ষা পেয়েছে। আলেকজান্ডার বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বাহার খন্দকার জানান, ভাঙন রোধে সেনা বাহিনী কাজ না করলে ঐতিহ্যবাহী আলেকজান্ডার বাজার এখন নদী গর্ভে থাকতো। ভাঙন ঠেকাতে পারায় বর্তমানে ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে ব্যবসা করছে।
রামগতি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন হেলাল বলেন, সেনাবাহিনীর সততা, আন্তরিকতা ও নিরলস পরিশ্রমে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি। বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করে রামগতি ও কমলনগরকে রক্ষা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
এদিকে, কমলনগরে বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ শুরু করে কমলনগর বাসীকে বাঁচাতে আহ্বান করছেন সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাস্টার আবুল খায়েরসহ সর্বস্তরের জনগণ।
সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. তানভীর হোসেন পিএসসি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা ও সার্বিক সহায়তায় সেনাবাহিনী দ্রুততার সাথে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলছে। এসডব্লিউও এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল ওহাবের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অত্র ইউনিটের সকল স্তরের সৈনিক গত পাঁচ মাসে ৩.৫ কি.মি. বাঁধের ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে।
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙন রোধে ৩৭ কি.মি. বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বরাদ্দকৃত অর্থে ৫.৫ কি.মি. বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। অবশিষ্ট অংশের বরাদ্দের পেতে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বরাদ্দ আসলে জনগণের দাবি মতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ করা হবে।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরে নদী ভাঙন রোধে ৩৭ কি.মি এলাকায় বাঁধ নির্মাণে পর্যায়ক্রমে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার অনুমোদন করে একনেক। প্রথম পর্যায়ে ১৯৮ কোটি টাকায় রামগতি ও কমলনগরে ৫.৫ কি.মি এলাকায় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। আরও ২৮.৫ কি.মি. বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভাঙন রোধে উক্ত কাজ সেনাবাহিনী বাস্তাবায়ণ করবে এমাটাই প্রত্যাশা রামগতি ও কমলনগর বাসীর।
0Share