এএনএম আশরাফ উদ্দিন: গভীর দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের লিখছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লক্ষ্মীপুর অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর পদশুন্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবি আলেকজান্ডার- রামদয়াল ৩.৫ কি:মি: কাজ শেষ করে তাদের সেটআপ নিয়ে চলে যাবে। তাই অনিশ্চয়তার অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে রামগতি কমলনগর নদীভাঙনে আতংকগ্রস্থ লাখো মানুষের ভাগ্য। ২৯/০৪/২০০৯ইং কমলনগর উপজেলার চর মার্টিনের কৃতি সন্তান আয়কর উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান এর আবেদনের প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড “ লক্ষ্মীপুর জেলাধীন রামগতি ও কমলনগর উপজেলা রক্ষার্থে মেঘনার অব্যাহত ভাঙনরোধে ৩৭ কি:মি: নদী তীর সংরক্ষণ” প্রকল্প তৈরী করে।
পরিকল্পনা কমিশনের প্রোগ্রামিং কমিটির সভায় প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৬৪৯.৯৮ কোটি টাকা কমিয়ে ২০০.০০ কোটির মধ্যে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণের শর্তে ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে প্রকল্পটি সবুজ পাতায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। ১৯/০৭/২০১২ইং তারিখে পানি সম্পদ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রকল্পটি বরাদ্দবিহীনভাবে অগ্রাধিকার তালিকায় ১২ নং ক্রমিকে রাখা হয়।
তৎপ্রেক্ষিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিইপিপি পুনর্গঠন করে অনুমোদনের প্রক্রিয়াকরনের জন্য ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডিউলিং (আইডব্লিউএম) কে নিয়োগ করে। ৩১/০৩/২০১৩ ইং তারিখে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডিউলিং আই ডব্লিউ এম প্রথম পর্যায়ে ১৯৮.০২ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ আলেকজান্ডার- রামদয়াল ৩.৫ কি:মি: কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরনগর ১.০০০ কি:মি: রামগতি বাজার ১.০০০ কি: মি: মোট ৫.৫০ কি:মি: দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫.৬ কি:মি: তৃতীয় পর্যায়ে ৪২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫.৫ কি:মি: মোট ৩৭ কি:মি” নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প উপস্থাপন করে।
রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নদীভাঙগনে আতংকগ্রস্থ অসহায় মানুষের হাহাকারের সাড়া মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আবদুল্লাহ আল মামুন সাহেবের একান্ত প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ০৫/০৮/২০১৪ ইং একনেকে প্রথম পর্যায়ে ১৯৮.০২ কোটি টাকায় আলেকজান্ডার-রামদয়াল ৩.৫০ কি:মি: কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরনগর ১.০০০ কি:মি: রামগতি বাজার ১.০০০ কি:মি: মোট ৫.৫০ কি:মি: নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্প অনুমোদন করেন। গণমানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে মো. আবদুল্লাহ আল মামুন মহোদয়ের একান্ত প্রচেষ্টায় প্রকল্পটির তদারকীর দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবি’র কাছে ন্যস্থ করা হয়।
বাজেটে বরাদ্ধ না থাকা সত্বেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবি কাজ শুরু করে নভেম্বর/২০১৪। সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যগনের দিন রাত কঠোর পরিশ্রমে সহযোগী তমা কন্সট্রাকশন, ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রামগতি উপজেলা কমপ্লেক্স. আলেকজান্ডার বাজার, রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
সেনাবাহিনীর কাজের সফলতার পেছনে রয়েছে তাদের সর্বাতক আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং বাঁধ রক্ষায় যখন যা প্রয়োজন তা ঠিকাদারদের দিয়ে করিয়ে নেয়া। তাতে আলেকজান্ডার রক্ষা পেলেও বাপাউবোর কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারগণ লাভবান হতে পারেনি। ফলে প্রকল্পটি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ফিরে পাওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কিছু অসাধু কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর কাজে সহযোগিতার পরিবর্তে নানা প্রতিকুলতা সৃষ্টি করছে।
বিগত অর্থ বছরে বাজেটে বরাদ্ধ না থাকলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রী. এমপি মামুন সাহেবের সদিচ্ছার কারণে ৬০ কোটি টাকা পেয়েও সেনাবাহিনী ৩.৫ কি:মি: এলাকায় ৭০% কাজ সম্পন্ন করেছে। চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে বাজেটে ১২৮ কোটি টাকা বরাদ্ধ পেয়েও সেনাবাহিনী কমলনগর ও রামগতি বাজার কাজ করতে পারছে না।
জরুরীভিত্তিতে লক্ষ্মীপুর জেলাধীন মেঘনার অব্যাহত ভাঙন থেকে রামগতি ও কমলগর উপজেলা রক্ষার্থে নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্থ করা প্রয়োজন। তাহলে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৩৭ কি:মি: নদীতীর সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সেট আপ থাকবে। অন্যথায় এ প্রকল্পটি সম্প্রসারন, অর্থ বরাদ্ধ এবং বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
চলতি বছর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলমান রাখার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড লক্ষ্মীপুর এর নির্বাহী প্রকৌশলীর শুন্যপদ পুরন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সেনাবাহিনীর কাজে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আবদুল্লাহ আল মামুন মহোদয়ের কাছে আমাদের আবেদন, আপনি ছাড়া আমাদের আর কোন অবলম্বন নেই। আপনি সব কিছু জানেন এবং বোঝেন। আমরা মহাবিপদগ্রস্থ। তাই অস্থিত্ব রক্ষায় দ্বিগবিদিক ছোটাছুটি করছি, তথ্য সংগ্রহ করছি এবং যোগাযোগ করছি বিভিন্ন বিভাগে। আমাদের কাজে বিরক্ত না হয়ে বিপদগ্রস্থ্যদের প্রতি সদয় হোন। একটি জনপদের লাখো মানুষের কথা ভেবে আপনি আরও সক্রিয় এবং সোচ্ছার হোন।
কমলনগর উপজেলা লক্ষ্মীপুর জেলার অংগ হিসেবে অত্র জেলা ও কমলনগর উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যার যা করার সুযোগ আছে এ কাজে দল মত ও সকল রাজনীতির উর্ধে কমলনগর উপজেলা নদীভাঙন থেকে রক্ষায় এগিয়ে আসুন।
লেখক: সাংবাদিক ও চেয়ারম্যান , চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদ, কমলনগর।
0Share