মেঘনার অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলা রক্ষায় নদী তীরে বাঁধ নির্মাণের দাবীতে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে, “কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চ” নামের একটি সংগঠন। ২৪ এপ্রিল সকাল ৯ থেকে ১১ টা পর্যন্ত মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন কবলিত কমলনগর উপজেলার মাতব্বহাট এলাকার মেঘনা পাড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে বলে গণমােধ্যমে পাঠানো সংগঠনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ও কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহবায়ক এ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পলোয়ান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে থেকে আরো জানা গেছে যে, উক্ত মানববন্ধনে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, রামগতি-কমলনগর আসনের সাবেক তিন সংসদ সদস্য আ স ম আবদুর রব, আবদুল্লাহ আল আল মামুন এবং এবিএম আশ্রাফ উদ্দিন নিজান উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
স্থানীয় ভাবে জানা যায়, মানববন্ধনটি সফল করতে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আয়োজকরা নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কমলনগর-রামগতি বাঁচাও মঞ্চের আহবায়ক এ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পলোয়ান বলেন, আশা করা হচ্ছে কমলনগর-রামগতি রক্ষার জন্য আয়োজিত এ মানববন্ধনটি হবে সর্ববৃহৎ মানববন্ধন। যেখানে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি থাকবে। তিনি গণমাধ্যমকর্মী সহ সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ সংগঠনের উদ্যোগে এবং একই দাবীতে গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয় ভাবে জানা যায়, গত ২০১৪ সালে কমলনগর-রামগতি রক্ষায় ৩৭ কি: মি: বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প পাশ হয়। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর অব আবদুল মান্নান কমলনগরের হাজিরহাট উপকূল কলেজ এবং মাতব্বরহাটে আয়োজিত সভায় পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, যে মেঘনার ভাঙন থেকে রামগতি-কমলনগর রক্ষার প্রকল্পটি গত ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল তারিখে বাতিল করা হয়েছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, এমন তথ্যের প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের মধ্যে বর্তমান প্রকল্প নিয়ে আতংক তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে তাদের দাবী সরকার প্রধানের নিকট পৌঁছানোর চেষ্টার অংশ হিবেবে এ মানববন্ধন আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের আহবায়ক।
জানা যায়, ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দ টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে।
এদিকে ওই বরাদ্দের ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটারের কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই বছর নিম্নমানের বালু ও জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ শুরু করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অনিয়মের প্রতিবাদে ও যথাযথভাবে কাজ করার দাবিতে ওই সময় মানববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে অনিয়মের মধ্য দিয়ে এক কিলোমিটার কাজ করা হলেও দেড় বছরে আট বার ধস নামে ওই বাঁধে।
মানববন্ধনে বক্তারা জানান, অবিলম্বে বাঁধের কাজ শুরু না হলে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে কমলনগর ও রামগতি নামের এই দুটি উপজেলা কয়েক বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। তাই এই দুই উপজেলার ৭ লক্ষ মানুষকে রক্ষায় দ্রুত নদী বাঁধের কাজ শুরু করার জন্য তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
0Share