মেঘনা নদীর অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙ্গন ও জোয়ারের পানির কারণে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে পরিবেশ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। ভাঙ্গনের তীব্রতায় ও নদীর জোয়ারে প্রতিদিনই বাড়ি ঘর বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ দু উপজেলার প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ অধিবাসী এখন পরিবেশ উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়ার আশংকা করছে।
দীর্ঘদিনের এমন ভয়াবহ ভাঙ্গন হতে জেলার দুটি উপজেলার ৩১ কিলোমিটার মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সিদ্ধান্ত নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। যে কোন সময় প্রকল্পটি সভায় উপস্থাপিত হতে পারে।
উক্ত প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দের ফাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গত ১৭ মে তারিখে স্বাক্ষর করেছেন। ফাইলটি আগামী একনেক সভায় উপস্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরে অনুমোদন পেলে ভয়াবহ ভাঙ্গন কবলিত মেঘনা নদী তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ।
অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব) আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ও একটি স্বাক্ষরে রামগতি-কমলনগরের প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ পরিবেশ উদ্বাস্তু হতে রক্ষা পেতে পারে। এজন্য তারা আশায় বুক বেধে আছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে জানান, প্রধানমন্ত্রী এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিরাশ করবেন না।
পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রামগতি-কমলনগর উপজেলার বড়খেরী, লুধুয়া বাজার ও কাদিরপন্ডিতের হাট এলাকা রক্ষা বাঁধ প্রকল্প নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাস্তবায়নের নিমিত্তে একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য (পতাকা-ক) খসড়া প্রনয়ণ করা হয়েছে। খসড়ায় পরিকল্পনামন্ত্রীর সইয়ের মাধ্যমে একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় ভাবে জানা যায়, মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের কারণে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার প্রায় ৪০ ভাগের বেশি এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতে ২০১৪ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দে রামগতিতে চার কিলোমিটার এবং কমলনগর উপজেলায় এক কিলোমিটার বাঁধ নিমার্ণ করা হয়। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুরে এসে অন্যান্য প্রকল্পের সাথে ওই বাঁধগুলো উদ্ধোধন করেন। কিন্ত ওই দুই উপজেলার আরো প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকা এখনো অরক্ষিত। এমন অরক্ষিত এলাকার প্রায় ৩৭ কিলোমিটার যায়গায় প্রতিনিয়ত ভাঙ্গন চলছে। গত চার বছর যাবত প্রতি জোয়ারে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে।
পাউবো সূত্র জানায়, ভাঙন কবলিত এলাকা বির্স্তীণ হওয়া এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্প্রতি একাধিকবার সার্ভে করা হয়েছে। এতে রামগতির বয়ারচর থেকে কমলনগরের মতিরহাট পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধের জন্য একটি প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কমলনগর-রামগতি রক্ষা মঞ্চের আহবায়ক ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি আবদুস সাত্তার পলোয়ান জানান, ভাঙ্গন আর প্রতিদিনের জোয়ারে নদী এলাকায় মানবিক বিপর্যয় চলছে। প্রধানমন্ত্রী ফাইলটিতে স্বাক্ষর করলে এ অঞ্চলের মানুষ বেঁচে থাকার নতুন করে স্বপ্ন দেখবে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধের একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ও বরাদ্দ ছাড় পেলেই তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু হবে।
0Share