আব্দুর রহমান বিশ্বাস | পূর্ণিমার প্রভাবে মেঘনা নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ডুবেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর, রায়পুরসহ মেঘনার উপকূলীয় এলাকা।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিকেলের দিকে জোয়ারের পানি উপকূলে ঢুকতে শুরু করে। এতে জেলার রামগতি, রায়পুর এবং কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদী সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মাছের গেরসহ নিচু ঘরের ভিটি তলিয়ে গেছে। তবে রাত ৮টার পর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার ছাড়াও গত রবি, সোম, মঙ্গল, ও বুধবার (২১ ও ২৪ জুলাই) একইভাবে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, টানা পাঁচদিন উপকূল প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ এবং ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন তারা। ক্ষেতের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি এবং গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। গৃহস্থালির রান্নার কাজেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
তাদের অভিযোগ, মেঘনা নদীর নির্মাণাধীন তীররক্ষা বাঁধ সময়মতো নির্মাণ না হওয়ায় প্রতি বছর জোয়ারের পানিতে ডুবতে হচ্ছে। দ্রুত বাঁধ নির্মাণ হলে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেত উপকূলের বাসিন্দারা।
কমলনগরের চরমার্টিন এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ জালাল আহমেদ জানান, জোয়ারের পানিতে তাদের বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। যাদের ঘরের ভিটি নিচু, তাদের ঘরে পানি ঢুকেছে। এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, এলাকার অনেকেই ক্ষেতে আমনের বীজতলা তৈরি করেছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
আবদুজ জাহের বলেন, রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া তার চাষের ৫টি মাছের ঘের ডুবে মাছ ভেসে গেছে।
উপকূলের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, দিনে এবং রাতে মিলিয়ে প্রতিদিন দুই বার জোয়ার উঠে। রাতের বেলা জোয়ারে হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। খাঁচার ভেতরে থাকা অনেকে মুরগি পানিতে ডুবে মারা যায়।
চরমার্টিন কালভার্ট এলাকার গৃহবধূ জাহানারা বলেন, জোয়ারের সময় খাটের ওপর বসে থাকি। চুলোয় পানি ঢুকে পড়েছে। রান্নার কাজ করা যায় না। শিশু সন্তানসহ পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বিপাকে পড়ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু কালাম ও করিম বলেন, জোয়ারের তোড়ে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ বছর অসময়ে (আগাম) জোয়ারের পানিতে উপকূল প্লাবিত হয়েছে।
মো. ইউসুফ নামে একজন বলেন, নদীর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। কিন্তু কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে জোয়ারের পানি বাড়লে উপকূল তলিয়ে যায়। এতে আমাদের ফসলসহ বসতবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তাই দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করার দাবি জানাই।
0Share