তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর: সু-পীয় পানি- বিদ্যুৎ ও ল্যাট্রিন নেই। মলমূত্র ত্যাগ, রান্না ও গোসলসহ ঘরের অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হয় মেঘনা-ডাকাতিয়া নদী ও তার সংযোগ খালে। গত ৪৩ বছর ধরে
চরম দূর্ভোগের মধ্যে জীবন যাপন করে আসছেন সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর ঘাট থেকে রায়পুর উপজেলার ২নং উত্তর চরবংশী ও ৮নং দক্ষিন চরবংশী ইউনিয়ন এবং হাইমচর উপজেলার চর ভৈরবী গ্রামের উপরে বেড়ি বাধেঁর দু পাশে বসবাস করা বাস্তুহারা-আশ্রয়ন কেন্দ্রÑ আবাসন ও আদর্শ গ্রামের বাসিন্দারা।
এসব অসহায় ভূমিহীনদের জন্য পৃথক তিনটি আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মাণ সহ বিভিন্ন সুবিধা দিতে সরকারের নিকট আবেদন জানান স্থানীয় শুশিল সমাজের লোকজন। এছাড়াও গত কয়েকদিন ধরে –সরকারী খাস জমি পাওয়ার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মিথ্যাভাবে তাদের নামে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
২২ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর টানা ৭ দিন মজু চৌধুরীর ঘাট, ২ ও ৮নং চরবংশী ও চরভৈরবী এলাকার বেড়ি বাঁধের উপর গেলে বসবাসকারীরা তাদের সুযোগ সুবিধা ও চাহিদা নিয়ে অভিযোগ করেন ও আবেদন জানান।
অনুসন্ধানে জানাযায়, বন্যা থেকে বাঁচার জন্য সরকার ৪৩ বছর আগে লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার মজু চৌধরী ঘাট, রায়পুর উপজেলার ২নং উত্তর ও ৮নং দক্ষিন চরবংশী এবং চর ভৈরবী এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২০ কি.মি. বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন।
তখন থেকেই বরিশাল,ভোলা থেকে আসা ও স্থানীয় বাস্তুহারা ও ভূমিহীন মানুষ এই বেড়িবাঁধের দ্ ুপাশে বসতি গড়ে তোলেন। বর্তমানে এ বেড়িবাঁধের উপর প্রায় ১০ হাজার পরিবার বাস করছে। যারা প্রথমে বসতি গড়ে তোলেন তারা আবার ১Ñ২ বছর থেকে অন্যেও কাছে ৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রী করে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু বসবাসকারী পরিবার গুলো বিদ্যুৎ,ল্যাট্রিন ও সু-পীয় পানির ব্যবস্থা নেই। তাই তারা নদী ও খাল পাড়ে মলমূত্র ত্যাগ, গোসলসহ ঘরের প্রয়োজনীয় কাজ করতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকার ও ২০০১ সালে আওয়ামীলিগ সরকার ভূমিহীন, দুস্ত ও অসহায় পরিবারের জন্য চরবংশী ইউনিয়নের স্লুইচ গেইট থেকে ৫০Ñ১০০Ñ২০০ গজ দুরুত্বে আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প ও একটি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেন।
তাদের জন্য পৃথক পৃথক সেখানে ২টি পুকুর, ৪টি ল্যাট্রিন ও ২টি চাপ কল নির্মাণ এবং সরকারী খাস জমি থেকে প্রতি পরিবারের জন্য ৮ শতাংশ করে জমি দান করেন। এ পরিবারগুলোকে পরিচালনার জন্য দুই জন করে পরিচালকের দায়িত্ব দেন।
আদর্শগ্রাম, আবাসন প্রকল্প ও কাচিয়ার চর আশ্রয় কেন্দ্রের পরিচালক আমির ছনি, মহসিন দালাল, মোস্তফা বেপারী বলেন, এখানে বিদ্যুৎ,ল্যাট্রিন,সু-পীয় পানি ও শিশুদের জন্য স্কুল না থাকায় আমরা যারা বসবাস করি তারা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা বাধ্য হয়ে নদী ও খাল পাড়ে মলমূত্র ত্যাগ, রান্নার ও ঘরের কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। প্রায় ৩ মাস আগে উপজেলা পরিষদে মাসিক সমন্নয় সভায় জেলা প্রশাসক এক সাংবাদিকের অনুরোধে ইউ.পি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে একটি কল দেওয়ার ব্যাবস্থা করেন। গত কয়েকদিন ধরে সরকারী ভাবে প্রর্কৃত ভূমিহীনদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এতে এক হাজার দরখাস্তের মধ্যে ৫’শ জনকে সরকারী খাস জমি থেকে ৮ শতাংশ জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালিরা তাদের অনুসারিদেরকে মিথ্যা ভূমিহীন সাজিয়ে ওই জমি দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
চরবংশীর মোল্লার হাট ও চর ভৈরবীর বেড়িবাঁধের উপর বাসিন্দা পেয়ারা ও আনোয়ারা বেগম সহ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন,যারা আমরা এই বেড়িবাঁধের উপর বসবাস করি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ, সু-পীয় পানি, ল্যাট্রিন না থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে নদীতে মলমূত্র ত্যাগ করতে হয় এবং গোসল,রান্না সহ ঘরের সব কাজে এই পানি ব্যবহার করতে হয়। এখানে বসবাস করলেও একজন আরেকজনের কাছে ৫Ñ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভিটে-মাটি বিক্রী করে অন্যত্র চলে যায়। আমরা অসহায় গরীব বলে সরকারী কোন জমি বা সহযোগিতা পাইনা। জনপ্রতিনিধিদেরকে শুধু ভোটের সময় দেখা যায়। তাই আমরা স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করি।
রায়পুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার আলতাফ হোসেন হাওলাদার আদর্শগ্রাম, আবাসন প্রকল্প ও কাচিয়ার চর আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দাদের অভিযোগ সত্য বলে স্বিকার করেন। তাদের স্থায়ী বসবাস সহ অন্যান্য সুবিধা যেন পেতে পারে সে জন্য সরকার সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আবেদন জানাবো।
লক্ষ্মীপুর (রায়পুর সদরের একাংশ) এমপি ও জাতীয় পার্টির নেতা মোহাম্মদ নোমান বলেন, সরকারী ও তার নিজের বরাদ্দ থেকে এসব মানুষ যেন সুবিধা বঞ্চিত না হোন সে দিকে তিনি সচেষ্ট রয়েছেন। আরও ২টি আশ্রয়ন কেন্দ্র করার জন্য সরকার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তিনি চেষ্টা করবেন।
0Share