মোবাইল ফোন থেকে নির্গত উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকী হতে চলেছে। এখনি এটি নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যবস্থা না নিলে দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এর শিকার হবে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
শনিবার রাজধানীর প্রেসক্লাবে ‘মোবাইল ডিভাইসের উচ্চ মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। একই সময় বিষয়টি নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান।
কামরুজ্জামান বলেন, দেশে এমন গবেষণা এখনো কেউ করেনি। আমরা এটির শুরু করেছি। কারণ, এখন যে পরিমাণ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তাতে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে একটা উদ্বেগ কাজ করে।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে কমপক্ষে এক দশক আগে মোবাইল থেকে নির্গত উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তারা সেখানে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এটি নিয়ে কেউ কোন কাজ করেনি।
দেশে ইতোমধ্যে মোবাইল ফোন থেকে নির্গত উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে অনেকের কানের বিভিন্ন রোগসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়ে এই গবেষক বলেন, রোগী কিন্তু বাড়ছে। এখন বিষয়টিতে নজর না দিলে আগামী এক দশক পরে দেখা যাবে এমন রোগীর সংখ্যা অনেক হয়ে গেছে।
মোবাইল ফোনের এমন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে একটি ভালো নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি তার বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন, মোবাইল ফোন অপারেটর, এমন সার্ভিস প্রোভাইডারদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেবার আহব্বান জানান তিনি।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, সরকার সম্প্রতি মোবাইল ফোনের আইএমইআই নাম্বারের ডেটাবেজ তৈরির কাজ শুরু করেছে। যাতে অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানি, চুরি ও প্রতারণা বন্ধ করা যাবে। কিন্তু জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
তিনি জানান, বিটিআরসি আন্তর্জাতিক নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রটেকশান কমিশনের (আইসিএনআইআপি) নীতিমালা অনুযায়ী একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। যা ভালো উদ্যোগ।
সংগঠনের পক্ষ থেকে সুপারিশ
মোবাইল ফোনের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ঠিক রাখতে এবং নীতিমালা প্রণয়ের জন্য পাঁচটি সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
১. নীতিমালায় গ্রাহকের স্বার্থ ও অধিকার যাতে নিশ্চিত হয়, তার বিধান রাখা
২. মোবাইলের মান পরীক্ষা করার জন্য আধুনিক পরীক্ষাগার স্থাপন করে নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রটেকশান কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষার পর বাজারজাতের অনুমতি প্রদান করা।
৩. জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর উচ্চ তেজস্ক্রিয়তা সম্পন্ন নিম্নমানের হ্যান্ডসেট দ্রুত বাজার থেকে প্রত্যাহার করা।
৪. দ্রুত পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চ তেজস্ক্রিয়তার হ্যান্ডসেট গ্রাহকদের উত্তোলন করে গ্রাহকদের মাঝে বিনামূল্যে বা অপারেটরদের মাধ্যমে সহজ শর্তে হ্যান্ডসেট প্রদানের ব্যবস্থা করা।
৫. হ্যান্ডসেটের মার্কেটে রেডিয়েশন পরিমাপ করার প্রযুক্তি স্থাপন করা। যাতে গ্রাহকরা কেনার আগে রেডিয়েশন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।
সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কে সিদ্দিক-ই-রব্বানী, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাছের খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কবির বাশার, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব্ বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস.এম নাজের হোসাইন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি ইউনিটের কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট সেক্রেটারিয়েট কনসালটেন্ট মো. হারুন-অর-রশিদসহ আরও অনেকে।
0Share