এমআর সুমন, রায়পুর: রায়পুর পৌর শহর এলাকায় হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এ পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত তিন দিনে উপজেলা হাসপাতালে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়া গত কয়েক দিনে ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগীকে চাঁদপুর জেলার মতলব আইসিডিডিআরবি পাঠানো হয়েছে। আমাদের রায়পুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন ডায়েরিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগ বয়স্ক।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর ৩নং ওয়ার্ডের আমিরুনেছা ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে বাড়ীতে মারা যায়। সোমবার পৌর ৭নং ওয়ার্ডের জাফর আহম্মেদ ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। নিহত ফাজরের স্ত্রী ও ছেলে বর্তমানে ডায়রিয়া আক্রন্ত হয়ে ঢাকা উন্নত চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়াও গত বুধবার পৌর শহরের পীর বাড়ীতে ভাড়াটিয়া শাফিয়া খাতুন নামের এক বৃদ্ধ মহিলার ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। হঠাৎ ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দু’দিন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শতাধিক রোগী। আর বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪৭ জন। যাদের অধিকাংশের বাড়ি পৌর শহরের।
হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, বেড কিংবা মেঝেতে পর্যন্ত নেই তিল ধারণের ঠাই। রাজু হাসান নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, আমাদের পরিবারে ৩ জন অসুস্থ হয়েছে। পরশুদিন রাতে ভর্তি করেছি। আমার বোন সুস্থ হয়েছে। বোনের বাচ্চা এখনো সুস্থ হয়নি।
পৌর শহরের আমেনা নামের এক রোগী বলেন, হঠাৎ করে আমার মেয়ের ডায়রিয়া শুরু হয়। তারপর আমার স্বামীর এবং এরপর আমার হয়েছে। আমেনা আরও জানান, আমরা তো পৌর সাপ্লাই পানি পানি খাই। পুকুরে গোসল আর রান্নার কাজ করি। আমার বাড়ির আশপাশের লোকজনও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
এ দিকে রোগীর চাপে ভালোভাবে চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ অনেকের। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মিতালী নামের এক রোগী জানান, স্যালাইনগুলো আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। ওষুধও আমরা অনেক সময় পাচ্ছি না। রোগীর চাপে নার্সরাও সেবা দিতে পারছে না ঠিকমতো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. বাহারুল আলম বলেন, পৌর এলাকা থেকে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা আসছেন তারা বেশিরভাগই বয়স্ক। শিশুরা কম আক্রান্ত হচ্ছে। হঠাৎ করে বেশি সংখ্যক রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেহেতু আমাদের জনবল কম। তারপরও আমরা সর্বাত্বক চেষ্টা করছি তাদের সেবা দিতে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রয়েছে ৬ বেড। বেডের চেয়ে রোগী খুবই বেশি হওয়ায় বর্তমানে সবগুলো বেডেই ডায়রিয়া রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাঃ জাকির হোসেন বলেন, ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়েছে। বেশির ভাগই রোগী পৌর শহরের। হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট নেই। হঠাৎ ডান্ডা পড়ায় ডায়রিয়া, ডান্ডা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের রোগী বেড়েছে। এতে আমরা ধারণা করছি কোনো খাবার অথবা পানির মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। যারা আক্রান্ত হয়নি তাদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, তারা যেন পরিস্কার বিশুদ্ধ পানি পান করেন এবং হাত ধৌত করেন। সেই সাথে বাসি-পঁচা খাবারও যেন এড়িয়ে চলেন তারা।
মতলব আইসিডিডিআরবির ডায়রিয়া বিভাগের সিনিয়র ডাঃ চন্দ্র শিখর রায় জানান, লক্ষ্মীপুর থেকে আসা ভর্তি হওয়া রোগীদের ৪০ শতাংশ বয়স্ক। রোগীদের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ তীব্র ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। গত তিন দিনের শুধু রায়পুরের ১১২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। রায়পুরে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণ খুঁজছে আইসিডিডিআরবি। তবে বয়ষ্ক রোগী বেশি হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে পানি থেকেই কোন সমস্যা হতে পারে।
0Share