নিজস্ব প্রতিনিধি: গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ নতুন জাতের সয়াবিন উদ্ভাবন করেছেন। আট বছরের বেশি সময় ধরে গবেষণায় এ উদ্ভাবনের পর এ বছরের জুলাই থেকে দেশের কয়েকটি স্থানে ‘বিইউ সয়াবিন-১’ এর আবাদ শুরু হয় বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
গবেষকরা জানান, নতুন উদ্ভাবিত এ জাতের সয়াবিনে গরুর মাংসের চেয়েও প্রোটিন বেশি। এর ব্যাপক চাষের মাধ্যমে দেশের পুষ্টি চাহিদা সহজেই মেটানো যাবে বলে মনে করছেন তারা।
“এর মধ্যে আলফা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা মানুষের শরীরে কোলেস্টেরল দ্রবীভূত ও নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধে সহায়ক,”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন ও কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আব্দুল করিমের নেতৃত্বে একদল গবেষক ২০০৫ সাল থেকে গবেষণা করে বিইউ সয়াবিন-১ উদ্ভাবন করেন। এ বছর এর আবাদ শুরু হয়।
ড. এম আব্দুল করিম জানান, এ জাতের সয়াবিনে প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৪০ ভাগ, যেখানে গরুর মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ২৭-৩০ ভাগ। পাশাপাশি হাঁস মুরগির খামারে উচ্চ পুষ্টিমান খাদ্য হিসেবেও এর ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রচলিত অন্যান্য জাতের সয়াবিনের তুলনায় এটি অন্তত ১৫ দিন আগে ফলন দিতে সক্ষম এবং গাছও হয় বেশ ছোট। বামন আকৃতির হওয়ায় ভূট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে সহযোগী ফসল হিসেবে এর আবাদ করা যায়।
তিনি জানান, লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ উত্তরবঙ্গে এ সয়াবিনের ব্যাপক চাষাবাদ সম্ভব।
ড. এম আব্দুল করিম জানান, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সংগৃহীত জার্মপ্লাজম থেকে বাছাইয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবিত এ জাতের সয়াবিন সাধারণের আবাদের জন্য চলতি বছর অবমুক্ত করা হয়। এটি আগাম পরিপক্ব ও খাট জাতের।
“এর শেকড়ে যে শুঁটি রয়েছে তা বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারে, যা মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। তাই অল্প সার প্রয়োগ করে এ জাতের সয়াবিন চাষে হেক্টর প্রতি ২ থেকে আড়াই টন ফলন পাওয়া যায়,” বলেন ড. করিম।
জাপানের মতো আমাদের দেশেও সয়াসস, সয়াকেক, সয়ামিষ্টি ও সয়ামিট বল অধিক ব্যবহার করে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবার রহমান জানান, নতুন উদ্ভাবিত বিইউ সয়াবিন-১ জাতের সয়াবিন অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া সয়াবিন চাষের উপযোগী। এরই মধ্যে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ চরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় এর আবাদ শুরু হয়েছে।
সব মিলিয়ে দেশের ৯০ হাজার হেক্টরে সয়াবিন চাষ হচ্ছে, যা থেকে প্রায় দেড় লাখ টন ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
0Share