সানা উল্লাহ সানুঃ উপকুলীয় জনপদ লক্ষ্মীপুর তার নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর। এ অঞ্চলের মানুষের আতিথেয়তা ও স্বতন্ত্র ঐতিহ্য এখন সারদেশে পরিচিত। অতিথি আপ্যায়নে লক্ষ্মীপুর জেলাবাসীর রয়েছে দারুন খ্যাতি। অতিথি হিসেবে কারও বাড়িতে যাবার সময় নানা রকমের মৌসুমী
ফল-ফলাদি, মিষ্টি-মিঠাই, পান-র্জদ্দা সঙ্গে করে নেওয়ার রীতি এ অঞ্চলের বেশ পুরনো। জেলার নানা ঐতিহ্যবাহী রীতি মধ্যে এ অঞ্চলের আতিথেয়তা নিয়ে লক্ষ্মীপুরটোয়েন্টিফোর ডটকমের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব “জামাই বাড়ির আম-কাঠাঁল”।
বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, জেলার নানা ঐতিহ্যের মাঝে সমকালীন বিশেষ ঐতিহ্যের নাম মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে মৌসুমী ফল পাঠানোর রীতি। যেটাকে এ অঞ্চলের স্থানীয়রা ‘জামাই-বাড়ির আম-কাঁঠাল’ নামেই জানেন। যুগযুগ ধরে এ অঞ্চলের মুসলিম পরিবার গুলো তে যেটা রীতি হিসাবেই চলে আসছে।
তবে স্থানীয় বয়স্কদের মতে, এ রীতি নিয়ে রয়েছে যেমনি সুখের স্মৃতি তেমনি রয়েছে কষ্টের অভিজ্ঞতাও ।
প্রতি বছর মৌসুমী ফলের সময় লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট বাজারে আম,কাঁঠাল, লিচু, আনারসসহ নানা দেশীয় ফল পাওয়া যায়। আম, কাঠাঁলের জন্য জ্যৈষ্ঠ মাস পরিচিত হলেও এ অঞ্চলের বাজারে ভালো মানের আম, কাঠাঁল আসে আষাঢ় মাসে। এ সময় পুরো জেলায় পাওয়া আম , কাঠাঁল।
তাই দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুসারে এ সময় এ অঞ্চলে লেগে যায় জামাই বাড়িতে আম-কাঠাঁল দেয়ার হিড়িক। মেয়ের শশুরালয়ে এ সময় পাকা ফল ঠেলাগাড়ি বোঝাই করে পাঠানো হয় । প্রতিদিনই জেলার সদর উপজেলা, রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর এলাকা এ দৃশ্য চোখে পড়ে। শুধু আম-কাঠাঁলই নয় সাথে থাকছে স্থানীয় নানা জাতের ফলসহ মুড়ি, মোলা, খৈ, চিড়া, দুধ,কলা, পিঠা পুলি।
ধনী গরিব যে যার যার সাধ্য মতো জামাই বাড়িতে পাঠাচ্ছে। আবার আম-কাঠাঁল আনা নেওয়াতে ও রয়েছে নানা রকমের দাওয়াত। নতুন মেয়ের জামাই বাড়িতে এর গুরুত্ব আরো একটু বেশি। কারণ নতুন জামাই বাড়ির আত্মীয়রা ও মৌসুমী ফলের এ উপঢৌকন তাদের আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে ও ভাগ করে নেন সমান আগ্রহ আর আনন্দে।
দীর্ঘ দিনের রীতি সর্ম্পকে কমলনগর উপজেলার মার্টিন গ্রামের নুরুল হুদা মিয়া বলেন, মেয়ের জামাই বাড়িতে আম-কাঠাঁল দেয়ার রীতি বহু পুরানো। কিন্তু ইদানিং আর্থিক স্বচ্ছল পরিবার গুলো মেয়ের বাড়িতে আম কাঠাঁলের সাথে বাড়তি নানা পণ্য পাঠিয়ে বা বেশি পরিমানে পাঠিয়ে গরিব পরিবারে মাঝে একটা নৈতিবাচক মানসিক চাপ তৈরি করছে। যার জন্য গরিব পরিবারগুলো এ সময়ে মানসিক চাপে থাকেন। তার মতে, সময় মতো মেয়ের জামাই বাড়িতে আম কাঠাঁল পাঠাতে না পারলে কোথাও কোথাও হালকা ঝগড়া-বিবাদ বা মনোমালিন্যও হচ্ছে।
সদর উপজেলার চর মনসা গ্রামের আবদুর জাহের বলেন, আমি গরিব মানুষ নিজের পরিবারের জন্য এ বছর একটি আম কাঠাঁল ও কিনতে পারিনি কিন্তু মেয়ের জামাই বাড়িতে সময় মতোই পাঠিয়েছি তবুও বেয়াই বাড়ির লোকজন রাগ।
এ রকম কিছু নৈতিবাচক ঘটনা ঘটলেও এখন এলাকার প্রায় সব বাড়িতে চলছে ফল খাওয়ার উৎসব। আত্মীয় স্বজন কিংবা অতিথীদের ও বরণ করা হচ্ছে ফল খাইয়ে।
অবস্থা দেখে মনে হয় এ রীতি চলবে যুগযুগ ধরে।
0Share