সানা উল্লাহ সানুঃ মেয়ের বিয়ে হয়েছে মাত্র কয়েক মাস। এরই মাঝে এবার প্রথম কোরবানী। তাই মেয়ের জামাই বাড়িতে যত দ্রত খাসি পাঠানো যায় ততই মঙ্গল। এটাই লক্ষ্মীপুরের হাল আমলের একটা বিশেষ সামাজিক রীতি। কিন্তু বিত্তবানদের জন্য এ রীতি সাধারণ খুশির বিষয় হলেও দরিদ্র
পরিবারগুলো মেয়ের জামাই বাড়িতে ঈদের খাসি পাঠানো নিয়ে অনেকটা দিশেহারা। ভুক্তভোগী আর এলাকার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
ঈদুল আযহা বা কোরবানীকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরে জমে উঠেছে খাসি ছাগলের বাজার। এবার খাসির দামও বেড়েছে বিগত বছরের তুলনায় বেশ কয়েকগুন । ক্রেতা বিক্রেতাদের মতে কোরবানীর চেয়েও জামাই বাড়ির ছাগল ক্রেতাদের কারণে বাজার বেশ গরম।
রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) কমলনগরের তোরাবগঞ্জ বাজারে প্রায় ১০ কেজি ওজনের একটি খাসি বিক্রি হয়েছে ১৮ হাজার টাকায়। সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জর ক্রেতা সফিক (ছদ্ম নাম) সেটা কিনেছে মেয়ের জামাই বাড়িতে পাঠানোর জন্য। ওই ক্রেতা জানান গত বছরে একই ওজনের এ রকম খাসি কিনেছেন মাত্র ৭ হাজার টাকায়।
কোরবানীর ছাগলের তুলনায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে জামাই বাড়ির খাসি এমন টা জানালেন হাটের বিক্রেতা নজির। তিনি জানান এ অঞ্চলে আগের দিনে সাধারণ মানুষ ছাগল দিয়ে কোরবান দিতো। কিন্তু এখন সবাই ছাগল কিনছে মেয়ের জামাই বাড়িতে পাঠাতে। এটা যেন এ অঞ্চলের অঘোষিত এক রেওয়াজ হয়ে দাড়িঁয়েছে।
বিক্রেতা নজিরের মতে, এলাকার বিত্তবানদের জন্য মেয়ে বাড়িতে ছাগল দেওয়া কোন কষ্টের বিষয় না হলেও গরিব মেয়েদের পরিবারে জন্য খাসি ক্রয় করা অত্যন্ত কষ্টকর। অনেক গরিব পরিবার নিজেরা কোরবান না দিলেও মেয়ে বাড়িতে ঠিকই ছাগল খাসি পাঠাতে হচ্ছে । তার মতে বর্তমানে খাসিও যৌতুকের ন্যায় ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান শুধু খাসিই নয়, সাথে আটা/ময়দা, মসল্লা, নারকেল, সুপারি এবং প্রচুর পরিমানে মুদি মাল ও পাঠাত হচ্ছে। গরিব পরিবারে অনেক জামাই শ্বশুর বাড়ি থেকে পাঠানো সে খাসি জবেহ না করে আবার বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। স্থানীয়রা জানান এভাবে এক একটি জামাই খাসি একাধিক বারও বিক্রি হচ্ছে।
ঈদে খাসি ছাগল পাঠানো কে কেন্দ্র করে অনেক পরিবারে নানা কলহ ও তৈরি হচ্ছে। আবার খাসি ছোট বড় কে কেন্দ্র করে নববধূর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো একটি ঘটনা ও ঘটেছে।
উপজেলার উত্তর চর মার্টিন গ্রামের রুপবানু (ছদ্ম নাম) বলেন, ২০ দিন আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছে, বিয়ের সময় জামাই পক্ষ কে ৪০ হাজার টাকা নগদে দিয়েছি। ৫০ জন মেহেমান খাওয়াতে হয়েছে। প্রথম বিয়ে এবং ঈদুল আযহা তাই বরের বাড়িতে খাসিঁ পাঠাতেই হবে। নইলে রক্ষা নেই দিনমজুর এ পরিবারে। ঈদুল আযহার আগেই মেয়ের শ্বশুরবাড়ি খাসি পাঠাতেই হবে বলে দিয়েছে মেয়ে। কি আর করা বাধ্য হয়ে দিনমজুর গৃহবধূ রুপবানু বিত্তশালী এক প্রতিবেশির কাছ থেকে ধার করে টাকা এনে নববিবাহিতা কন্যার বাড়িতে খাসি দিচ্ছেন।
স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, আবহমান কাল ধরে চলে আসা বৃহত্তর নোয়াখালী বিশেষ করে লক্ষ্মীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলমান কিছু সামাজিক রেওয়াজের সাথে বর্তমানে যোগ হয়েছে নতুন কিছু রীতি। কিন্তু এ সকল রীতি নিম্নবিত্ত এবং দরিদ্র পরিবারের জন্য তা ভয়াবহ কষ্টের কারণ হয়ে দাড়াঁচ্ছে। সদর উপজেলার মাদরাসা শিক্ষক মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, এ অঞ্চলের প্রবাসীরাই সর্বপ্রথম জামাই খাসি রীতি চালু করেন । কিন্তু বর্তমানে সেটা সমাজ কে করুন পরিণতির দিকে ও দাবিত করছে।
ইতোপূর্বে জেলার বেশ কিছু রেওয়াজ ছিল“ইফতারি, ছালামি, আম-কাঁঠালি পাঠানো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নতুন সংযোজন কোরবানের ঈদে মেয়ের জামাই বাড়িতে ছাগল বা খাঁসি প্রদান। বিষয়টা যৌতুক প্রথার ন্যায়।
বহুল প্রচলিত আঞ্চলিক পীড়াদায়ক রীতিটি ইসলামের দৃষ্টিতে কতোটুকু প্রযোজ্য? সেটা নিয়ে ইতোমধ্যে বির্তক শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, অযাচিত এ সংস্কৃতির অতল গহ্বর থেকে এ অঞ্চলের দরিদ্র পরিবার গুলো রক্ষা করা এখনই প্রয়োজন।
0Share