লক্ষ্মীপুর ডায়েরি থেকে: বাংলাদেশের মেঘনা উপকূলীয় জনপদ লক্ষ্মীপুর। চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত গ্রাম এ অঞ্চল কে সম্মৃদ্ধ করেছে। মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের কুল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ জনপদ নারিকেল, সুপারি, ইলিশ এবং সয়াবিনের জন্য পুরো দেশে বিখ্যাত। নদী ভাঙ্গা এ এলাকার প্রধান সমস্যা।
ইংরেজ শাসনামলে এ জনপদের নামকরণ করা হয়। বর্তমান লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এলাকার সামান্য কিছু অংশ বাংলার প্রাচীন জনপদ সমতটের অর্ন্তভুক্ত ছিলো। সমতটের দক্ষিণাংশে জন্ম নেয় ভুলুয়া পরে সেটি হয় ভুলুয়ারাজ্য। বহু সময় পরে ভুলুয়া রাজ্য নানা পরিবর্তনের মাঝে হয় নোয়াখালী। ব্রিটিশ আমলে নোয়াখালীর পশ্চিমাঞ্চলের যে এলাকাটির নামকরণ করা হয় লক্ষ্মীপুর, সেটি আজকের লক্ষ্মীপুর জেলা।
ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে সব কয়টি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে রয়েছে লক্ষ্মীপুরের গুরুত্বপূর্ন ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কমরেড তোয়াহা এবং সানা উল্লাহ নূরীর জন্ম স্থান লক্ষ্মীপুরে। দেশের জাতীয় পতাকা যিনি সর্ব প্রথম উড়িয়েছেন সেই আ স ম আবদুর রবের জন্ম ভূমি এ লক্ষ্মীপুরে। ১৯৭১ সালে এখানেও ছোট বড় কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ এ পাকিস্তানী শাসনের পরীধনতা থেকে লক্ষ্মীপুর শহর মুক্ত হয়। জাতীয় সংসদের স্পীকার ও রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহর জন্মস্থান লক্ষ্মীপুর। এভারেষ্ট পর্বত বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশী নারী নিশাদ মুজমদার এবং শতাধিক দেশ ভ্রমণকারি নারী নাজমুন নাহার লক্ষ্মীপুরের নাগরিক হিসাবে গর্ববোধ করেন।
কমরেড তোয়াহার হাতে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, মরহুম জমির আলীর হাতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, আ স ম আবদুর রবের হাতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সাবেক জাসদ বর্তমানে জেএসডিসহ অন্তত ৫টি বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলের জন্মদাতাদের জন্মভূমি লক্ষ্মীপুর। বর্তমানে বিশ্ব বিখ্যাত ইলিশের উৎপাদনস্থল এবং সয়াবিন উৎপানের স্বর্ণ রাজ্যের নামও লক্ষ্মীপুর। নারিকেল, সুপারি, ঘিগজ মুড়ি এবং মহিষের দই এ এলাকার ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে যুগযুগ ধরে। সে ঐতিহ্যগুলো শুধু লক্ষ্মীপুরের সম্পদই না, এগুলো বাংলাদেশের গর্বের সম্পদও বটে।
১৭৫০ সালের বেঙ্গল গেজেট এবং ১৯১১, ১৯৭৭ সালের নোয়াখালী ডিস্ট্রিক্ট গেজেটার থেকে জানা যায় মোঘল আমলের বার ভুইঁয়া বা নরপতি এবং ব্রিটিশ আমলের ইংরেজ শাসক সবার কাছে লক্ষ্মীপুরের দুটি এলাকা খুবই প্রয়োজনীয় এবং আলোচিত ছিলো। এদের একটি হ”্ছে বর্তমান সদর উপজেলার তেয়ারিগঞ্জ ইউনিয়নের শহর কসবা। যেখানে মোঘল আমলের নরপতিদের মিলিটারী ঘাঁটি ছিলো। অন্যটি হচ্ছে একই ইউনিয়নের ফরাশগঞ্জ। যেখানে স্টীমারঘাট বা নৌঘাঁটি ছিলো।
লক্ষ্মীপুরে থানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে ইংরেজ আমলে ১৮৫০ সালের দিকে ফরাশগঞ্জ স্টীমারঘাট এলাকায় নোয়াখালির হাতিয়া থানার অধীন ফরাশগঞ্জ ফাঁড়ি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য বর্তমান সদর উপজেলার বাঞ্চানগরের দক্ষিণাংশে রহমতখালী নদীর পাড়ে ফরাশগঞ্জের সেই থানা কে স্থানান্তরিত করা হয়। এর নামকরণ করা হয় লক্ষ্মীপুর ফাঁড়ি থানা।
১৮৬০ সালে ইংরেজ কোম্পানী আমলে লক্ষ্মীপুর নামের থানাটি সর্ব প্রথম নোয়াখালীর একটি পূর্নাঙ্গ থানা হিসাবে ঘোষণা করা হয় । ১৯৭৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ৫নং বাঞ্চানগর ইউনিয়ন কে লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় রুপান্তরিত করা হয়। পরে এই পৌরসভাটির বর্তমান অবস্থায় বিস্তৃতি ঘটে।
১৯৭৯ সালের ১৯ জুলাই রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নিয়ে লক্ষ্মীপুর মহকুমা এবং একই এলাকা নিয়ে এরশাদ সরকারের সময় ১৯৮৪ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর কে জেলা ঘোষণা করা হয় । ১৯৮৪ সালের ২৪ মার্চ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা গঠিত হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন এ জেলায় যুগযুগ ধরে বিদ্যমান। সংক্ষিপ্ত পরিসরে লক্ষ্মীপুরের পরিচিতির আরো কিছু দিক।
জেলা ব্র্যান্ডিং নামঃ সয়াল্যান্ড লক্ষ্মীপুর।
জেলার থীমঃ নারিকেল সুপারি ভরপুর সয়া-ইলিশের লক্ষ্মীপুর।
পৃথিবীর মানচিত্রে লক্ষ্মীপুর জেলার কৌণিক অবস্থান: ২২.৮৭ ডিগ্রী উত্তর থেকে ২২.৯৪ ডিগ্রী উত্তর এবং ৯০.৫২ ডিগ্রী পূর্ব থেকে ৯০.৮২ ডিগ্রী পূর্ব পর্যন্ত।
লক্ষ্মীপুর জেলার সীমানা: উত্তরে চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে ভোলা ও নোয়াখালী জেলা, পূর্বে নোয়াখালী জেলা, পশ্চিমে বরিশাল ও ভোলা জেলা এবং মেঘনা নদী।
লক্ষ্মীপুর জেলার আয়তনঃ ২০১১ সালের আদমশুমারি তথ্যমতে, জেলার মোট আয়তন ১৪৪০.৩৯ বর্গকিমি (সদর ৪৮০.৩৫ বর্গকিমি, রায়পুর ১৯৫.৯৮ বর্গকিমি, রামগঞ্জ ১৬৯.৩২ বর্গকিমি, রামগতি ২৭৯.৮৮ বর্গকিমি, কমলনগর ৩১৪.৮৬ বর্গকিমি)
জনসংখ্যা ও ভোটারঃ আদমশুমারি তথ্য মতে, লক্ষ্মীপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ১৭ লাখ ২৯ হাজার ১শ ৮৮ জন (সদর ৬৮৪৪২৫ জন, রামগতি ২৬১০০২ জন, রায়পুর ২৭৫১৬০ জন, রামগঞ্জ ২৮৫৬৮৬ জন, কমলনগর ২লাখ ২২ হাজার ৯শ ১৫ জন)। পুরুষ ও মহিলা- ৪৯.২১% ও ৫০.৭৯%, জনসংখ্যার ঘনত্ব- ১২০০ জন প্রতিবর্গ কিঃ মিঃ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার- ১.৪৮%।
ধর্মীয় জনগোষ্ঠিঃ
মুসলমান: ৯৬.৪৫%, হিন্দু ৩.৪৪% অন্যান্য ০.০১% মসজিদ- ৩৩৩৫টি, মন্দির- ৪৫টি, গীর্জা- ১টি, দরগাহ- ৬টি, মাজার- ১৫টি, আশ্রম- ২টি, হরিসভা- ৮টি।
লক্ষ্মীপুর জেলার প্রশাসনিক তথ্যঃ
বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৫টি উপজেলা (সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগিত, কমলনগর), ৬টি থানা (সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগিত, কমলনগর, চন্দ্রগঞ্জ), ৫টি পুলিশ ফাঁড়ি (শহর, দাসের হাট, হায়দারগঞ্জ, হাজীমারা, বড় খেরী-নৌ পুলিশ ফাঁড়ি) পুলিশ তদন্দ্র কেন্দ্র ৩টিঃ (চন্দ্রগঞ্জ, দত্তপাড়া, হাজির হাট) হাইওয়ে পুলিশ ১টি চন্দ্রগঞ্জ, ৫টি পৌরসভা (সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগিত, চন্দ্রগঞ্জ), ৫৮ টি ইউনিয়ন, ৪৫৫টি মৌজা ও ৫৪৭টি গ্রাম রয়েছে। জেল খানা ঃ ১টি আদালত ভবন ঃ চৌকি/মুন্সেফী আদালত (১৮৭০), জজকোর্ট (০১-১২-১৯৮৮)।
তথ্য সূত্র: লক্ষ্মীপুর ডায়েরি
লক্ষ্মীপুর ডায়েরি সর্ম্পকে জানতে এ লিংকে ক্লিক করুন অথবা ভিজিট করুন www.lakshmipur24.com/ld
লক্ষ্মীপুর জেলা, রামগতি, রামগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর সদর এবং কমলনগর উপজেলা, লক্ষ্মীপুর জেলার সকল পৌরসভা এবং ইউনিয়ন গুলো সর্ম্পকে আরো বিস্তারিত জানতে আজই সংগ্রহ করুন লক্ষ্মীপুর জেলার বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ লক্ষ্মীপুর ডায়েরি।
কারণ
চাকুরী প্রত্যাশী ছাড়াও লক্ষ্মীপুর সর্ম্পকে জানতে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ, ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, গবেষক, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভার কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তাসহ যে কোন নাগরিকের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হিসেবে ইতোমধ্যে পরিচিত হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে পাওয়া যায়:
১. টাউন লাইব্রেরি, চক বাজার, লক্ষ্মীপুর।
২. হাছানিয়া লাইব্রেরি, চক বাজার, লক্ষ্মীপুর।
৩. পাঠক বন্ধু লাইব্রেরি, কলেজ গেইট রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর।
ঢাকায় পাওয়া যায়:
১। পাঠশালা, ২২, আজিজ সুপার মার্কেট (নিচ তলা), শাহবাগ, ঢাকা।
২। রহমানিয়া লাইব্রেরী, ৪২/৪৩ নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা। ( সদরঘাট, ১নং লালকুঠি গেইট সংলগ্ন)
মোবাইল ০১৭১১-৫৬২৫৭০ ০১৩০৯-০০৩০৩৪
অনলাইনে রকমারিতে পাওয়া যায়:
ঠিকানা: https://www.rokomari.com/book/174834/lokkhipur-diary
সরাসরি ক্রয় করতে পারেন:
ফেসবুকে Sana Ullah Sanu ঠিকানায় ফোন নংসহ ঠিকানা ইনবক্স বা 01511 022222 নাম্বারে ফোন করুন
0Share