জুনাইদ আল হাবিব: একটু কাশফুল ছাড়া প্রকৃতির কথা ভাবুনতো। কেমন লাগে? নিশ্চয় প্রকৃতিকে প্রাণহীন মনে হবে, তাই না? নিশ্চয়, তাই হবে৷ কারণ, কাশফুলহীন প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনা করাটাও বেমানান। কাশফুল প্রকৃতিতে এ বন্ধু হয়ে আসে শরতের মাধ্যমে। এজন্য কাশফুলকে শরতের বন্ধুও বলতে পারি আমরা। শরতে গ্রাম বাংলার মেঠোপথ, দিগন্তজোড়া ফসলি মাঠের কোণে কোণে চোখে পড়ে কাশফুলে চেয়ে যাওয়া প্রকৃতি। শরতের আসল সৌন্দর্যই হলো কাশফুল।
চলার পথে কাশফুল চোখে পড়লে বুঝা যায়, প্রকৃতিতে যেন শরত নেমেছে। কাশবনে কাশফুল ফুটলেই কেবল শরতের আসল রূপ অনুভব করা যায়। শরতের জন্যই এ কাশফুলের আবির্ভাব। কাশফুল না ফুটলে শরতও যেন প্রাণবন্ত হয় না। শরতের এ মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির আসল চেহারা ফুটে ওঠে, যখন আকাশের রঙটা নীল রঙে ভরে থাকে। কাশফুলের সাদা রঙ আর নীল রঙা আকাশ যেন মিশে একাকার হয়ে থাকে। এ সৌন্দর্য ছড়ায় গ্রামীণ পথে-প্রান্তরে, মানুষের হৃদয়ে। মানুষের হৃদয় হয়ে ওঠে কাশফুলময়।
প্রকৃতি পিপাসুর অপেক্ষায় আকাশে উঁকি মেরে দখিনা বাতাসের স্পর্শে দুলছে কাশফুল। কখন প্রকৃতি ভক্ত কেউ এসে কাশফুল স্পর্শ করবে, সে অপেক্ষায় সময় কাটে কাশফুলের। কাশফুলও চায় তার কাছে কেউ আসুক। আর এতেই কাশফুল তার ফোটার স্বার্থকতা অনুভব করে। কারণ, কাশফুল নিজে ফুটে অন্যের মনে প্রশান্তি জাগায়।
কোথায় মিলছে এ কাশফুল? রাজধানী ঢাকার মুগদা এলাকায় গেলে বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে এ কাশফুলের দেখা মিলে। রাজধানীর ভেতরেই কাশফুলের এ অভয়ারাণ্য দর্শনার্থীদেরও মুগ্ধ করছে। শহরের যান্ত্রিকতাকে দূরে ঠেলে একটু সস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ঘুরে আসতে পারেন মুগদা এলাকায়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুস সাত্তার পালোয়ান বলছিলেন, ছুটির দিনে, বিশেষ করে শুক্রবারে কাশফুল দেখতে মানুষের ভিড় দেখা যায়। তখন সড়কের এমন অবস্থা হয় যে, অনেক যানজট সৃষ্টি হয়। বিরাট-বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কাশফুল থাকার কারণে যে কেউ ছুটে আসে এখানে।
কাশফুলের আরেক অভয়ারণ্য চোখে পড়ে মেঘনা উপকূলের লক্ষ্মীপুরে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনাতীরের বিশাল একটি এলাকাজুড়ে কাশফুলের রাজত্ব দেখে অবাকই হতে হয়। পুরো মেঘনাতীর যখন কাশফুলে চেয়ে থাকে, তখন প্রকৃতির মাঝে কেবলই অপুরান সৌন্দর্য বিরাজ করে। মেঘনাতীরে এত কাশফুল ফোটার পেছনে একটা কারণও আছে। আর সেটা হচ্ছে যে, মেঘনাতীরে প্রচুর চরি খাল(নতুন খাল) জেগেছে। মেঘনার জোয়ারের ফলে পানির ঢেউয়ের সঙ্গে কাশবন চলে আসে। তাই খাল যেভাবে আঁকাবাঁকা পথ বয়ে চলেছে, ঠিক সেভাবে প্রকৃতিতে ফোটা কাশফুলও আঁকাবাঁকা পথ বেছে নিয়েছে।
কমলনগরের চর কালকিনির পুরো মেঘনাতীর জুড়েই এ কাশফুল চোখে পড়বে। প্রকৃতি মানুষকে স্বাগত জানাতে, কাশফুলও যেন গভীর আনন্দে বাতাসে দোল খেলছে। খুব সহজে এ কাঁশফুল দেখতে হলে কমলনগরের তোরাবগঞ্জ থেকে মতিরহাট সড়কের মতিরহাটের কাছে গেলেই দক্ষিণে চোখ ফেরালে এ কাশফুলের অভয়ারণ্যের দেখা মিলবে। গাড়ি থামিয়ে ছুটতে মন চাইবে কাশফুলের জগতে হারিয়ে যেতে।
স্থানীয় লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হেলাল মাহমুদ বলছিলেন, আগের মতো কাশফুলের দেখা আমরা সচরাচর দেখতে পাই না। তবে এখানের কাশফুল দেখে আমি সত্যিই অবাক। আসলে প্রকৃতির পরিবর্তিত রূপই আমাদেরকে প্রকৃতির মাঝে লুকিয়ে থাকা নয়নাভিরাম দৃশ্যের সাথে সখ্যতা গড়ায়। কাশফুলের কাছে এলে মনটা ফ্রেস থাকে। শরতকে অনুভব করি। বাঙালি জাতি হিসেবে ঐতিহ্যের ধারক এ কাশফুল। তাই আমাদের উচিত, অন্তত কাশফুল দেখার। এতে মনও তৃপ্তিতে ভরপুর থাকবে।
শরতের এ ঋতুতে আপনার চারপাশেই হয়তো ফুটে আছে কাশফুল। কাশফুলের দৃশ্যে নিজকে হারানোর সুযোগ এখনি। তাই প্রিয়জন, স্বজন সবাইকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন কাশফুলের মায়াজাগানো অপরূপ দৃশ্য দেখতে।
0Share