৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা শহর পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে প্রকাশ্য লাল সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন লক্ষ্মীপুর শহরে।
লক্ষ্মীপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ, “লক্ষ্মীপুর ডায়েরি’’ সূত্রে জানা যায়, ৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর শহর হানাদার মুক্ত হলেও জেলার বর্তমান বিভিন্ন উপজেলাধীন যুদ্ধকালীন এলাকাগুলো অন্যান্য সময়ে হানাদার মুক্ত হয়। যার মধ্যে,
৯ ডিসেম্বর:
বর্তমান রামগতি-কমলনগর (সাবেক রামগতি) হানাদার মুক্ত হয় ৯ ডিসেম্বর তারিখে।
১২ ডিসেম্বর:
রায়পুর উপজেলা হানাদার মুক্ত হয় ১২ ডিসেম্বর তারিখে।
১৪ ডিসেম্বর:
লক্ষ্মীপুরের বাণিজ্যিক এলাকা বর্তমান চন্দ্রগঞ্জ ১৪ ডিসেম্বর তারিখে হানাদার মুক্ত হয়।
১৯ ডিসেম্বর:
১৬ ডিসেম্বর তারিখে সারাদেশ হানাদার মুক্ত হয়ে বিজয় লাভ করলেও রামগঞ্জ উপজেলা হানাদার মুক্ত ১৯ ডিসেম্বর তারিখে।
এর আগে ৯মাস যুদ্ধকালিন সময়ে পাক সেনারা রাজাকার আল বদর ও এদেশীয় দোষরদের সহযোগিতায় তৎকালীন নোয়াখালীর জেলার বর্তমান লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণসহ হাজার হাজার নিরীহ জনসাধারণকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। মহান স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও এ সব হত্যা কান্ডের বিচার পাননি অনেক পরিবার। সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের কাছে জেলায় ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবী জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর ১৯টি সম্মুখযুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চলে।
এ সব যুদ্ধে ৩৫জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ওই সময়ে রাজাকারদের সহযোগিতা নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী কয়েক হাজার মুক্তিকামী নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। লুটপাটসহ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, মুক্তিকামী মানুষদের হাজার হাজার ঘরবাড়ী।
পরবর্তীতে ৪ ডিসেম্বর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী ও প্রয়াত সুবেদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হন। প্রত্যেকটি দলে ৮/১০ জন করে দল গঠন করে বিভক্ত হয়ে দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, শাখারী পাড়ার মিঠানীয়া খাল পাড়সহ বাগবাড়িস্থ রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালান দুঃসাহসিক এ সব মুক্তিযোদ্ধারা।
অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা ৭০/৮০জন সশস্ত্র রাজাকারকে আটক করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেন। সেদিনই বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনী মুক্ত করেন লক্ষ্মীপুরকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ”জয় বাংলা” শ্লোগান দিয়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের “লাল সবুজের পতাকা”।
যুদ্ধকালিন সময়ে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের আজও নীরব সাক্ষী হয়ে আছে, জেলা শহরের বাগবাড়িস্থ গণকবর, সারের গোডাউনে পরিত্যাক্ত টর্চারসেল, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন মাদাম ব্রীজ বধ্যভুমি, পিয়ারাপুর ব্রীজ, বাসু-বাজার গণকবর, চন্দ্রগঞ্জ, রসুলগঞ্জ ও আবদুল্যাপুরে গণকবর এবং রামগঞ্জ থানা সংলগ্ন বধ্যভূমি। এ ছাড়া নানান স্থানে আরো অনেক বধ্যভূমি রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। আজো ওই সব বধ্যভমি সংরক্ষিত হয়নি। তবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে জানাানো হয়েছে, কেন্দ্রিয় দপ্তরে ওই সব তালিকা পাঠানো হয়েছে।
৪ ডিসেম্বরকে যথাযথভাবে পালনের জন্য প্রতি বছর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল থেকে দিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়।
0Share