আজকাল কত রকম পার্টির কথাই না আমরা শুনে থাকি। এই যে দরুণ, জন্মদিনের পার্টি, নাচ-গানের পার্টি, বন্ধু-বান্ধবদের পার্টি, চা পার্টি, কফি পার্টি, ফাস্টফুড পার্টিসহ নানান ধরণের পার্টি৷ কিন্তু হাঁস পার্টির কথা আমরা ক’জনেই বা জানি? আসুন আজ আমরা জানবো, হাঁস পার্টির ইতিবৃত্ত।
কিভাবে এই হাঁস পার্টির প্রচলন: শীতকালে সাধারণত হাঁসে প্রচুর পরিমাণে চর্বি জমা হয়। যার কারণে শীতে হাঁস খাওয়ার মজাটাই যেন একটু আলাদা স্বাদের। যেন একটু বেশিই স্বাদের। শীতের প্রকোপে শরীরের রক্ত মাংস যখন নিস্তেজ হয়ে যায়, তখন শরীরে শক্তি বাড়াতে লক্ষ্মীপুর জেলার মানুষের মাঝে এ রেওয়াজটা দেখা যায়। শীতকালে হাঁস পরিপুষ্টি লাভ করে। ফলে হাঁসের মাংস খাওয়ার উপকারিতা অনেক আর শীতকালই হচ্ছে এর উপযুক্ত সময়। পারিবারিকভাবে হাঁস রান্না করে খেলেও গত কয়েক বছর ধরে এ জেলার তরুণদের দলবেঁধে হাঁস খাবার প্রবণতা চোখে পড়ে। যা এখন জেলাজুড়ে সর্বত্র। উদ্যোগ হয় ভিন্ন আয়োজনের। বন্ধুমহলের বন্ধুরা মিলে শীত হাঁস খাবার এই দারুণ আয়োজনটি হাঁস পার্টি নামে ছড়িয়ে পড়েছে সব দিক।
বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে হাঁস পার্টির গুরুত্ব: শীতকালে হাঁস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে একদিকে যেমন ভিন্ন শক্তি জমা হয়, ঠিক তেমনই বন্ধুবান্ধবের মাঝে সৃষ্টি হয় এক ধরণের সুসম্পর্ক। একসাথে হাঁস পার্টিতে হাঁস খেলে বন্ধুত্বের বন্ধনটা দৃঢ় হয়, পাশাপাশি চাঙা থাকে সবার শরীর-স্বাস্থ্য। লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯৬-ব্যাচের বন্ধুদের নিয়ে গঠিত হয়েছিলো রিলেশন এ ফ্রেন্ডলি সোসাইটি। সংগঠনটির সদস্যরা মন্ত্রনালয় থেকে দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত৷ প্রতি বছরে একবার হলেও তারা একসাথে মিলিত হয়। সে নিয়ম অনুযায়ী তারা একসাথ হয়। জেলা শহর থেকে দূরের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে তারা একটি হাঁস পার্টির আয়োজন করে। গল্প, আড্ডা, স্কাউটিং এর নিয়ম অনুযায়ী আগুন জ্বালিয়ে ক্যাম্পায়ারের মাঝেই হয়ে গেল হাঁস পার্টি। এভাবেই লক্ষ্মীপুর জেলাজুড়ে বিভিন্ন সংগঠন ও বন্ধুসহল গত কয়েক বছর ধরেই এ আয়োজনের আসর জমাচ্ছেন।
হাঁস খাওয়ার প্রবণতা: শীতের আগমনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এখানে বেশ জমজমাটভাবে হাঁস খাওয়া হয়। হাঁস রান্নার জন্য সুন্দর রেসিপি তৈরি করতে বাজার থেকে ভালো মসলাও কেনেন মানুষজন। এমন রেওয়াজ এ অঞ্চলের সর্বত্রই দেখা যায়। শীতকাল এলেই হাঁসের স্বাদ যেন দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। শীতে মানুষের শরীরটা যখন খুব নিস্তেজ হয়ে পড়ে, ঠিক তখনি হাঁসের মাংসের দারুণ স্বাদে শরীর গরম হয়। গ্রাম থেকে কোথাও মানুষ দীর্ঘমেয়াদী কোনো কাজ করতে গেলে হাঁস খেয়ে যান। যেমন ইটভাটার শ্রমিকরা। ছয় মাস তারা বাড়িতে থাকেন না। এ সময় কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এ শ্রমিকদের। তাই কাজ যেন ঠিকমতো করতে পারে, সেজন্য হাঁস খেতে বেশ তৎপর থাকেন তারা।
শীতে হাঁস পার্টি জমাতে চাইলে: সাধারণত লক্ষ্মীপুরের এ সর্বত্র হাঁস পার্টি হলেও হাঁস কেনার জন্য অবশ্যই গ্রামের হাঁসগুলোকে পছন্দ করেন বেশিরভাগ মানুষ। কারণ, গ্রামাঞ্চলে ফসল উৎপাদন করা হয় বলে হাঁস পালন ভালো হয়। চর্বি, পুষ্টি, ক্যালরি। সব দিক থেকেই এ হাঁসগুলো উন্নতমানের। পরিপুষ্ট প্রতিটি হাঁসের মূল্য ৫শ থেকে ৬শ টাকা। গ্রামের মেঠোপথগুলোতে চোখ ফেরালে হাঁস বিক্রেতাদের দেখা মিলে। যারা মাথায় হাঁস বহন করে বিক্রি করেন। হাঁস কিনতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন হাঁট বাজার থেকে কেনা যাবে। গ্রামাঞ্চলে কারো যদি কোন স্বজন বা পরিচিত থাকে, তবে তাদের মাধ্যমেও এ হাঁস কিনে নিতে পারেন।
লক্ষ্মীপুর আসতে চাইলে: রাজধানীর ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সড়ক পথে এবং সদরঘাট থেকে লঞ্চ যোগে চাঁদপুর হয়ে লক্ষ্মীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র ঝুমুর বা উত্তর স্টেশন নামতে হবে। সে ক্ষেত্রে সড়ক পথে খরচ হবে ৮০০টাকা আর লঞ্চে গেলে ৬০০টাকা। তবে লঞ্চে কেবিন বা ভিআইপি সিট নিলে ভাড়া বাড়বে। তারপর আপনি জেলার গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে হাঁস সংগ্রহ করতে পারবেন।
0Share