বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ‘প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে’ ( ১২ নভেম্বর ‘৭০ এর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বিধ্বস্ত) তৎকালিন নোয়াখালীর রামগতি সফর শুরু করেন। সেখান থেকে তিঁনি ভোলা যাবেন।
তিঁনি রামগতিতে কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন। তিঁনি সেখানে জনগণের স্বেচ্ছাশ্রমে একটি উপকূলীয় বাধ নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এ বাঁধ নির্মাণে কয়েক হাজার সেচ্ছাসেবী কাজ করছে। পানি সম্পদ মন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ও রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ এ সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সফর সঙ্গী ছিলেন।
রামগতির মেঘনার চরে এক জনসভায় তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ১ ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। তিনি বলেন এ সরকার জনগণের সরকার, সাধারণ মানুষের সরকার। তিঁনি বলেন আমাদের এমন একটি সমাজ গড়ে তূলতে হবে যে সমাজে এ কৃষকরা এ শ্রমিকরা এ ক্ষুধার্ত জনগণ আবার হাসতে পারবে। তিঁনি বলেন জনগণের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে দেশের স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে। কাজেই স্বাধীনতা সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি মূলত সংগ্রাম কেবল শুরু হয়েছে। তিঁনি বলেন এবারের সংগ্রাম সোনার বাংলা গড়ে তোলার সংগ্রাম। তিঁনি বলেন আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি, এর বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিঁনি বলেন কারো কাছে আলাদীনের চেরাগ নেই। রাতারাতি এসব সমস্যা সমাধান কারো পক্ষে সম্ভব নয়। নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম করে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
তিঁনি জনগণের কাছে জানতে চান রাস্তা বাঁধ সেতু নির্মাণে তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিতে রাজী কিনা জনতা হা সূচক জবাব দেয়। তিঁনি বলেন দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তিঁনি বলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা সকলেই আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছে কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারী এবং পাকিস্তানী দালালরা তাদের কাছে এখনো অস্ত্র রেখে দিয়েছে। এসকল দালালদের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে তা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার জন্য তিঁনি জনগণের প্রতি আহবান জানান। তিঁনি বলেন আমি আঠারো থেকে বিশ ঘণ্টা কাজ করি। তিঁনি সকলকে আরও পরিশ্রম করার আহবান জানান। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভূট্টো বাঙ্গালীদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেছেন তাই তিঁনি সেখানকার বাঙ্গালীদের নিয়ে খুব উৎকণ্ঠিত।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভোলার শান্তির হাটে এক জনসমাবেশে বলেছেন, “পরিবার প্রতি কারো একশত বিঘার বেশী জমি থাকবে না প্রয়োজনে এ সিলিং আরও কমানো হতে পারে। ফলে বাড়তি যে জমি পাওয়া যাবে তা সরকারের খাস খতিয়ানে এনে ভূমিহীন গরীবদের বন্দোবস্ত দেয়া হবে।”
বিকেলে তিনি ভোলার দৌলতখানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন। উভয় সফরে তিঁনি প্রকাশ করেন, এদেশে কারো একশ বিঘার বেশী জমি রাখতে দেয়া হবে না।
এ বিষয়ে যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর রামগতি-হাতিয়া জোন কমান্ডার, তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন বলেন, প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন ও বাংলাদেশে প্রথম স্বেচ্ছাশ্রমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করতে বঙ্গবন্ধু রামগতি আসেন। আমরা রামগতির মুক্তিযোদ্ধারা গার্ড দিয়ে এবং মাটি দিয়ে বর্তমান বেড়িবাঁধের বাইরে বক্তৃতার মঞ্চ করি। এসময় মাটি কেটে আলেকজান্ডার-সোনাপুর সড়কের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু।
যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর রামগতি থানার ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউল আলম হান্নান (সুইডেন প্রবাসী) বলেন, সেইদিন বঙ্গবন্ধুর দেশ পুনর্গঠনের আহবানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ, ছাত্র ও যুব সমাজ দেশ গড়ার জন্য একত্রিত হয়েছে। সেদিনের সাড়া জাগানো শ্লোগান ছিল: ‘চলো চলো বান্দের (বাঁধের) হাট’, ‘এসো এবার দেশ গড়ি’।
তথ্য সূত্রঃ
যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর রামগতি-হাতিয়া জোন কমান্ডার, তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেন,
যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর রামগতি থানার ডেপুটি কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউল আলম হান্নান,
মানিকগঞ্জ বার্তা।
124Share